আপনি যদি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অন্তত একটা ফুটবল ম্যাচ দেখে থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই একটা দৃশ্য চোখে পড়েছে যেখানে দুই ফুটবলার মাঠে মুখোমুখি কথা বলছেন, কিন্তু দুজনেরই হাত মুখের ওপর। অথবা এমন দৃশ্যও হয়তো চোখে পড়েছে, যেখানে খেলা শেষে ফুটবলাররা নিজের সতীর্থের সঙ্গে বা প্রতিপক্ষের ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলছেন, কিন্তু তাদের হাত নিজেদের মুখের উপর। শুধু ফুটবলারই নয়, অনেক সময় দেখা যায়, কোচরা রেফারির সঙ্গে কথা বলছেন, তখনও হাত থাকে মুখের উপর। ফুটবলে এমনটা নিত্যদিনের চিত্র।
ভক্তদের কাছে বিষয়টি যেন রহস্যই। তবে ফুটবল বিশেষজ্ঞ এবং ফুটবলারদের মতে, মুখ ঢেকে কথা বলার পেছনে প্রধানত দুইটি কারণ রয়েছে। গোপনীয়তা রক্ষা এবং স্পষ্টভাবে কথা শোনানো।
এইচডি ক্যামেরা, স্লো মোশন রিপ্লে আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে ফুটবলারদের প্রতিটা মুহূর্ত পর্যবেক্ষণে থাকে। আগে যা শুধু মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকত, এখন তা জুম করে দেখা যায়, এবং ঠোঁট পড়ে ফেলা হয় অনায়াসে। এ কারণেই মাঠে কথা বলার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলেন ফুটবলাররা।
ম্যানচেস্টার সিটির সাবেক অধিনায়ক কাইল ওয়াকারের ভাষায়, “এটা আসলে ক্যামেরা যেন দেখতে না পায়, সেই জন্যই।” তিনি আরও বলেন, অনেক সময় খেলোয়াড়দের মধ্যে হালকা ঠাট্টা-মশকরা চলে, যা সব সময় টেলিভিশনের সামনে বলার মতো হয় না। হয়তো আগের সপ্তাহে পার্টিতে দেখা হয়েছিল, সেটার কথা বলছে… একটু মজা করেই। কিন্তু এখনকার যুগে সবকিছু ধরা পড়ে। লিপ-রিডার পর্যন্ত আছে! এই দুনিয়া কোথায় চলে যাচ্ছে!”
বর্তমান বাস্তবতায়, যেখানে প্রতিটা বাক্যকে টেনে ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেখানে খেলোয়াড়রা নিজেরাই আরও সাবধানী হচ্ছেন। আর তাই সাবধানতার কারণেই মুখ ঢেকে কথা বলেন ফুটবলাররা।
প্রিমিয়ার লিগের অনেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে কাজ করা পিআর কনসালট্যান্ট ফিল হল জানান, “একজন খেলোয়াড় আমাকে বলেছিল, কাছাকাছি কেউ থাকলে মুখ ঢেকে বললে সে আরও স্পষ্টভাবে শুনতে পারে। স্টেডিয়ামে এত শব্দ থাকে, গ্যালারির চিৎকার, প্রতিধ্বনি- তাতে শব্দ অনেক সময় হারিয়ে যায়।”
একটা ফগহর্ন যেমন শব্দকে একটা নির্দিষ্ট দিকে পাঠায়, মুখ ঢেকে কথা বলাও ঠিক তেমন। ৬০,০০০ দর্শকের সামনে চিৎকার করলেও কথা না পৌঁছালে কাজ হয় না, কিন্তু হাত মুখে রেখে সামনে থাকা সতীর্থকে বলা গেলে সেটা পৌঁছে যায়।
যেটা একসময় ছিল গোপনীয়তা রক্ষার উপায়, এখন সেটা অনেকের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ছোটরাও এটা শিখছে। টিভিতে দেখে, বড়দের অনুসরণ করে। ফুটবলের নতুন যুগে এটা যেন এক নতুন চর্চা যেখানে মিডিয়া আগ্রহ, প্রযুক্তি আর গোপনীয়তা মিলেমিশে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।
ভাইরাল হয়ে যাওয়া ঠোঁট পড়ে ফেলার ঘটনাগুলো, কিংবা ড্রেসিং রুমের ফাঁস হওয়া ভিডিও, সবকিছু মিলিয়ে এখনকার তারকারা জানেন, মাঠে বা মাঠের বাইরে আসলে ‘অফ দ্য রেকর্ড’ কিছুই নেই। তাই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কথা বলা হয়ে উঠেছে একধরনের আত্মরক্ষার কৌশল।
মন্তব্য করুন