মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোর মাঝে ছোট্ট একটি রাষ্ট্র ইসরাইল। ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ফিলিস্তিন অঞ্চল ছেড়ে যাওয়ার পর ব্রিটেনের শূন্যতা পূরণ করে ইহুদি গোষ্ঠী ঘোষণা করে “ইসরাইল রাষ্ট্রের” জন্ম। সেই ছোট্ট রাষ্ট্রটি শুধু টিকে থাকেনি, বরং হয়ে উঠেছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে প্রভাবশালী এবং শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর একটি। কীভাবে? চলুন ধাপে ধাপে দেখি।
যুক্তরাষ্ট্র: ইসরাইলের জন্মদিনেই প্রথম স্বীকৃতি দেয়। পরবর্তীতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বৈদেশিক সহায়তা পেয়ে আসছে ইসরাইল।
ব্রিটেন ও ফ্রান্স: ব্রিটিশদের সরাসরি ভূমিকা ছিল ফিলিস্তিনে ইহুদিদের অভিবাসনে সহায়তা করা এবং পরে ইসরাইলকে রক্ষায় ভূমিকা রাখা।
সামরিক সহায়তা: ১৯৫৬ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধের সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কোটি কোটি ডলার মূল্যের সামরিক সহায়তা পেয়ে আসছে ইসরাইল।
ইসরাইল একের পর এক যুদ্ধ করেছে প্রতিবেশী আরব দেশগুলোর সঙ্গে (১৯৪৮, ১৯৬৭, ১৯৭৩) এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হয়েছে।
আধুনিক অস্ত্র ও প্রযুক্তি: ইসরাইলের রয়েছে উন্নত সাইবার নিরাপত্তা, মিসাইল প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ও গোয়েন্দা সংস্থা (যেমন মোসাদ)।
পরমাণু শক্তি: ষাটের দশকেই গোপনে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করে। ধারণা করা হয়, বর্তমানে ইসরাইলের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে।
সেনাবাহিনীতে বাধ্যতামূলক নিয়োগ: ১৮ বছর পূর্ণ হলেই নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যা রাষ্ট্রকে রণপ্রস্তুত রাখে।
ইসরাইলকে অনেকেই বলেন “স্টার্টআপ নেশন”। কারণ:
দেশটিতে প্রচুর সংখ্যক প্রযুক্তি কোম্পানি এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান আছে।
উচ্চশিক্ষিত জনশক্তির কারণে কৃষি, স্বাস্থ্য, ফুড প্রসেসিং, প্রযুক্তি ইত্যাদি খাতে রয়েছে উল্লেখযোগ্য সাফল্য।
মরুভূমি অঞ্চলেও আধুনিক সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি উৎপাদন সম্ভব করেছে।
ইসরাইলের নীতিনির্ধারকরা শুরু থেকেই সামরিক, প্রযুক্তি, কৃষি ও কূটনৈতিক খাতে ভবিষ্যতমুখী চিন্তা করেছে।
নেতৃত্বের প্রধান বৈশিষ্ট্য ছিল দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।
ইউরোপ থেকে আগত ইহুদি নেতারা আধুনিক চিন্তাভাবনা ও শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়ে একটি সুসংগঠিত রাষ্ট্রব্যবস্থা তৈরি করেন।
ইসরাইলকে অনেক বিশ্লেষক বলেন, “মধ্যপ্রাচ্যের মাঝে এক টুকরো পশ্চিমা রাষ্ট্র”।
পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মিল থাকায় ইসরাইল সেখানে ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে জায়গা করে নেয়।
আরব দেশগুলোর মধ্যে অগণতান্ত্রিক শাসনের বিপরীতে ইসরাইল একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক কাঠামো তৈরি করে।
তবে ইসরাইলের এই শক্তি অর্জনের পেছনে আছে বিতর্কও।
আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড দখল এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।
পশ্চিমা সমর্থনের কারণে বহুবার পার পেয়ে গেছে বলে মনে করেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
ইসরাইলের শক্তি কেবল সামরিক নয়, বরং এক বহুমাত্রিক সক্ষমতা — প্রযুক্তি, কূটনীতি, অর্থনীতি এবং নেতৃত্বে। এর পেছনে যেমন রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ও জাতিগত সংহতি, তেমনি রয়েছে পশ্চিমা বিশ্বের কৌশলগত সমর্থন। তবে এসব অর্জনের ছায়ায় থেকে গেছে নানা বিতর্ক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস।
মন্তব্য করুন