প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নারী বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘নারী বিরোধী শক্তি যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চেষ্টা করছে, তা মোকাবিলায় দেশের সকল মানুষকে একত্রিত হয়ে লড়াই করতে হবে।’ শনিবার (৮ মার্চ) ‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’ উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজে এখনো অনেকেই নিপীড়িত নারীদের পাশে দাঁড়ানোর পরিবর্তে তাদের অবজ্ঞার চোখে দেখে। কিন্তু নারীর প্রতি সহিংসতা ও নির্যাতন বন্ধ করতে হলে, বৈষম্যহীন ও সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে হলে নারীদের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের সমর্থন জানানো ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নারীকে খাটো করে দেখার এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। তা না হলে আমরা জাতি হিসেবে এগোতে পারব না।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে নারীরা সামনের কাতারে থাকলেও এখনো অনেক ক্ষেত্রে তারা পিছিয়ে রয়েছেন। নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। দুস্থ মায়েদের আর্থিক সহায়তা, নারীদের প্রশিক্ষণ, ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি, কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল ও ডে কেয়ার সেন্টার প্রতিষ্ঠাসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আরও কী করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা চলছে।’
সম্প্রতি নারীদের ওপর হামলার ঘটনা উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের সম্পূর্ণ বিপরীত। আমরা নারী-পুরুষ সকলের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। আমাদের সকল শক্তি দিয়ে এই লক্ষ্য অর্জন করব।’
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে সরকারের অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘অনেক সময় নারীরা নির্যাতনের শিকার হলেও তারা জানেন না কোথায় অভিযোগ করবেন। এজন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে। পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০ হালনাগাদ করা হচ্ছে। এছাড়া যৌন হয়রানি প্রতিরোধ ও সুরক্ষা আইন, ২০২৫ প্রণয়নের কাজও চলছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনও তাদের সুপারিশ দেবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মেয়েরা সাহসিকতার সঙ্গে তাদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। শত বাধা পেরিয়ে তারা রাজনীতি, অর্থনীতি ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছে। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন রয়েছে। সম্প্রতি ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এ রেকর্ডসংখ্যক নারী ক্রিকেট, ফুটবল, কাবাডি, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল ও বাস্কেটবলসহ বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়েছে। এতে দেশজুড়ে ২৭ লাখ ৪০ হাজার মেয়ে প্রায় ৩ হাজার খেলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়।’
নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় পুরুষদেরও সহযোদ্ধা হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন বাংলাদেশ গড়তে নারীদের অংশগ্রহণ ও অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি। নারীরা তাদের অধিকার ও স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমেই অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক নারী দিবসের সূচনাও নারীদের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে হয়েছে। বাংলাদেশেও নারীরা তেভাগা আন্দোলন, ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে।’
ইতিহাসের অনেক বীর নারীদের অবদান ভুলে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া নারীদের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগ আমরা ভুলব না। নতুন বাংলাদেশ গড়তে নারীদের অংশগ্রহণ ও অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। এজন্য নারী ও পুরুষদের একসাথে কাজ করতে হবে।’
শেষে তিনি সমাজে নারীদের ন্যায্য স্থান প্রতিষ্ঠায় পুরুষদের উৎসাহী সহযোগিতায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মন্তব্য করুন