Reporter Imageআরসিটিভি ডেস্ক
৪ জানুয়ারী ২০২৫, ৩:৩৯ পূর্বাহ্ন

শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট: যশোর পৌরসভায় উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

ছবি: সংগৃহীত

যশোর পৌরসভায় ভূগর্ভস্থ পানি স্তরের ক্রমাগত অবনতি এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। পৌরসভার ১৪.৭২ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অন্তত ১১ হাজার বাড়িতে স্থাপিত সাবমারসিবল পাম্প প্রতিদিন বিপুল পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করছে। এই অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলনের কারণে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে সুপেয় পানির সংকটকে আরো প্রকট করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যশোর পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে প্রতিদিন ২ কোটি ৪৪ লাখ ২০ হাজার লিটার পানির চাহিদা থাকলেও পৌরসভা ২৯টি পাম্প দিয়ে মাত্র ২ কোটি ১১ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। প্রতিদিন ৩৩ লাখ লিটার পানির ঘাটতি রয়েছে, যা শুষ্ক মৌসুমে আরও বাড়ে।

পৌর এলাকায় ১২ হাজারের বেশি টিউবওয়েল থাকলেও শুষ্ক মৌসুমে ভূগর্ভস্থ স্তর ২৫ থেকে ৩১ ফুট নিচে নেমে যায়। ফলে টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে। পানির ঘাটতি মেটাতে বেশিরভাগ বাসাবাড়ি সাবমারসিবল পাম্পের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।

শহরের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন, বহুতল ভবনের মালিকরা পৌরসভার পানি সরবরাহ লাইনে মোটর সংযোগ দিয়ে পানি টেনে নিয়ে নিজেদের ট্যাংকে জমা করছেন। এতে অন্য বাসাবাড়ির পানির সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে।

রায়পাড়ার বাসিন্দা হেলেনা পারভীন বলেন, “আমরা বিল দিয়েও ঠিকমতো পানি পাচ্ছি না। ট্যাপ দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে পানি পড়ে। এই অনিয়ম বন্ধ হওয়া উচিত।”

নাগরিক আন্দোলনের নেতা জিল্লুর রহমান ভিটু বলেন, “পৌরসভার সরবরাহকৃত পানি অনেক ক্ষেত্রেই পান ও রান্নার কাজে উপযোগী নয়। ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের বিকল্প খুঁজে বের করতে হবে।”

যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিএম কামাল আহমেদ বলেন, “পানির চাহিদা পূরণে আমাদের সক্ষমতা এখনও পর্যাপ্ত নয়। পৌরসভার তিনটি পানিশোধন প্ল্যান্ট থাকলেও শোধন প্রক্রিয়া ব্যয়বহুল। এই শোধিত পানির খরচ পৌরবাসীর জন্য বহনযোগ্য নয়। ফলে সাবমারসিবল পাম্প বন্ধ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।”

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. কেএম দেলোয়ার হোসাইন জানান, যশোর পৌরসভার মতো একটি শহরে ১১ হাজার সাবমারসিবল পাম্প স্থাপন অত্যধিক। শুষ্ক মৌসুমে এই পাম্পগুলো ভূগর্ভস্থ পানির স্তরকে আরও নিচে নামিয়ে দিচ্ছে।

তিনি সতর্ক করে বলেন, “এই অনিয়ন্ত্রিত উত্তোলন একসময় ‘অ্যাকুইফার’ স্তরে লবণাক্ততা (স্যালাইনিটি ইনট্রুইশন) সৃষ্টি করতে পারে। এতে ভূগর্ভস্থ পানির মান স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ভবিষ্যতে বড় ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ঝুঁকি বাড়বে।”

করণীয়

  1. পানি ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন: বিকল্প জলাভূমি বা ভূপৃষ্ঠের পানির উৎস ব্যবহারের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
  2. সাবমারসিবল পাম্প নিয়ন্ত্রণ: পৌরসভার অনুমোদন ছাড়া পাম্প স্থাপন বন্ধ করা প্রয়োজন।
  3. সচেতনতা বৃদ্ধি: ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হতে নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে।
  4. উন্নত শোধন প্রক্রিয়া: পৌরসভার পানিশোধন প্ল্যান্টগুলোর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।

যশোর পৌরসভার পানির সংকট একটি গুরুতর সমস্যা। সঠিক পরিকল্পনা এবং ব্যবস্থাপনা না থাকলে শুষ্ক মৌসুমে এই সংকট আরও তীব্র হবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বিশুদ্ধ পানির প্রাপ্যতা হুমকির মুখে পড়বে।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপি কখনো বিশ্বাস ঘাতকতার রাজনীতি করেনি: পঞ্চগড়ে ফরহাদ হোসেন আজাদ

পাকিস্তান সিরিজের দল ঘোষণা বাংলাদেশের, দলে জায়গা পেলেন যারা

চাঁদাবাজদের সামলান, নাহলে জনগণ ফ্যাসিস্টদের মতো বিতাড়িত করবে: রাজশাহীতে হেফাজতে ইসলামের নেতারা

পরিবেশ ও জলবায়ু রক্ষায় ফুলবাড়ীতে ৯ হাজার ইউক্যালিপটাস গাছের চারা ধ্বংস

পঞ্চগড়ের পৃথক দুই সীমান্ত দিয়ে নারী-শিশুসহ ২৪ পুশইন করেছে বিএসএফ

গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রায় হামলার প্রতিবাদে লালমনিরহাটে জামায়াতের বিক্ষোভ

গোপালগঞ্জকে ‘মুজিববাদমুক্ত’ করার ঘোষণা দিলেন নাহিদ ইসলাম

শুক্রবার মিলবে ফ্রি ইন্টারনেট, পাবেন যেভাবে

“আমার সময়ে ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ ছিল ফ্যামিলি ফ্রেন্ডলি”: নাদিয়া মিম

বার্সেলোনার নতুন ১০ নম্বর জার্সি ইয়ামাল

১০

ঢাকার সব থানার সামনে বিকেলে মানববন্ধন এনসিপির

১১

ঐতিহাসিক জয় জুলাই শহীদদের উৎসর্গ করলেন লিটন

১২

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় রাষ্ট্রের আপিল শুনা শুরু

১৩

ফরিদপুর, রাজবাড়ি ও মানিকগঞ্জে এনসিপির কর্মসূচি আজ

১৪

আলাস্কায় ৭.৩ মাত্রার ভূমিকম্প, সুনামির সতর্কতা

১৫

গোপালগঞ্জে হামলার প্রতিবাদে সারা দেশে এনসিপির বিক্ষোভ আজ

১৬

সাকিবদের হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে রংপুর রাইডার্স

১৭

গোপালগঞ্জে হামলা নিয়ে ট্রল: ফেসবুক পোস্ট ঘিরে উত্তাল দিনাজপুর, এএসপি মোশফেক প্রত্যাহার

১৮

সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামছে বাংলাদেশ

১৯

রণক্ষেত্র গোপালগঞ্জ, ১৪৪ ধারা জারি

২০