সিনেমা বাংলাদেশের বিনোদনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম ছিল। একসময় সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা সিনেমা হলগুলো ছিল সিনেমা প্রদর্শনের প্রাণকেন্দ্র। পরিবার-পরিজন নিয়ে দর্শকরা সারা বছরই সিনেমা হলে ভিড় করতেন। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বর্তমানে মানসম্মত সিনেমার অভাব এবং অন্যান্য চ্যালেঞ্জের কারণে একের পর এক বন্ধ হচ্ছে সিনেমা হল।
১৯৫৬ সালে দেশের প্রথম সবাক সিনেমা ‘মুখ ও মুখোশ’ মুক্তি পাওয়ার পর সিনেমা শিল্পে বিপ্লব ঘটে। সিনেমা হলের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১৯৮০-এর দশকে সর্বোচ্চ ১৪৭০-এ পৌঁছায়। কিন্তু শূন্য দশকের শুরু থেকে সিনেমায় অশ্লীলতার সংক্রমণ এবং মানহীন কনটেন্ট দর্শকদের হলবিমুখ করে। এর প্রভাব এতটাই তীব্র যে, বর্তমানে দেশে চালু সিনেমা হলের সংখ্যা মাত্র ৬০।
রাজধানীতে একসময় ৪৪টি সিনেমা হল ছিল। আজ সেগুলোর বেশিরভাগই বন্ধ হয়ে গেছে। উদাহরণস্বরূপ:
সিনেমা হলগুলোর কর্ণধাররা জানাচ্ছেন, মানহীন সিনেমা এবং লগ্নি ফেরত না আসার কারণে ব্যবসা ধরে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
দেশের প্রায় ২৯টি জেলা এখন সিনেমা হলশূন্য। বিগত বছরগুলোতে ঢাকার বাইরের অনেক বড় এবং ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হলও বন্ধ হয়ে গেছে। দর্শকের অভাবে ও উচ্চ খরচের চাপ সামলাতে না পেরে মালিকরা হল বন্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
সিনেমা হল বাঁচাতে প্রয়োজন মানসম্মত কনটেন্ট। চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির ভাইস প্রেসিডেন্ট মিয়া আলাউদ্দিন বলেছেন:
“যেসব সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে, তা দর্শক টানতে ব্যর্থ। এক কোটি টাকা খরচ করে সিনেমা বানালেও লগ্নি ফেরত আসছে না।”
সিনেপ্লেক্সগুলো কিছুটা ব্যবসা ধরে রাখলেও প্রথাগত সিনেমা হলগুলোর ভবিষ্যৎ অন্ধকার। বিদেশি সিনেমার মুক্তি নিয়েও নানা জটিলতা রয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ‘পুষ্পা-২’-এর মুক্তি আটকে দেওয়ার কথা উল্লেখ করা যায়।
বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পের হারানো গৌরব ফিরে পেতে হলে মানসম্মত সিনেমার উৎপাদন ও প্রদর্শন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায়, সিনেমা হলের ক্রমাগত বন্ধ হওয়া দেশের সংস্কৃতি এবং বিনোদন শিল্পের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মন্তব্য করুন