RCTV Logo আরসিটিভি ডেস্ক
৪ মে ২০২৫, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন

জনপ্রশাসন সংস্কার বড় রূপান্তরের দায়িত্ব পড়বে নির্বাচিত সরকারের ওপর

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করতে লাগবে দীর্ঘ সময়। এজন্য সংস্কারের এসব দায়িত্ব পড়বে নির্বাচিত সরকারের ওপর। তাদের ওপরই নির্ভর করবে বড় সুপারিশ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য ১১টি কমিশন গঠন করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। গণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ৩ অক্টোবর এ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় সংস্কার কমিশন।

সংস্কার প্রতিবেদনকে মোট ১৭টি অধ্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের আচরণগত সংস্কার, নাগরিক পরিষেবা উন্নয়নে জনপ্রশাসন, জনপ্রশাসনের প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পুনর্গঠন (মন্ত্রণালয়/দপ্তর পুনর্বিন্যাসকরণ), সিভিল সার্ভিসের কাঠামো ও প্রক্রিয়াগত সংস্কার, জনপ্রশাসনে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সংস্কার, জনপ্রশাসনে নিরপেক্ষতা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংস্কার, জনপ্রশাসনের নৈপুণ্য বিকাশ ও সক্ষমতার উন্নয়ন, কর্মদক্ষ জনপ্রশাসনের জন্য সংস্কার, জনপ্রশাসনে কার্যকারিতার লক্ষ্যে সংস্কার, বাংলাদেশ স্বাস্থ্য সার্ভিস সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা, বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস সংস্কারে বিশেষ সুপারিশমালা, পার্বত্য এলাকার জনপ্রশাসন সংস্কারে বিশেষ সুপারিশ, জনপ্রশাসনে নারীবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিতে সংস্কার প্রস্তাব।

১৪টি বিভিন্ন শিরোনামে প্রায় ২০০ সুপারিশ করেছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। বাস্তবায়নের সুবিধার্থে সুপারিশগুলোকে প্রাধিকার ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি— এই তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করা হয়েছে। কমিশনের মতে, স্বল্পমেয়াদি সুপারিশ ছয় মাসের মধ্যে বাস্তবায়ন করা যাবে। আর মধ্যমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে লাগবে এক থেকে দুই বছর। দীর্ঘমেয়াদি সুপারিশ বাস্তবায়নে লাগবে আরও বেশি সময়।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড়-বড় সুপারিশগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দেশের পুরোনো চারটি বিভাগ যথা- ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগ নিয়ে চারটি প্রদেশ এবং রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্রশাসিত একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ গঠন করা। অন্যদিকে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংস্কারের বিষয়ে নানা সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া প্রশাসনে নানামাত্রিক সংস্কারের সুপারিশও করেছে এ কমিশন।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া এবং সরকারের কার্যপরিধি সুবিস্তৃত হওয়ার ফলে বর্তমান মধ্য প্রশাসনিক ও স্থানীয় সরকার কাঠামো যথেষ্ট বলে প্রতীয়মান হয় না। অপরদিকে, মেয়াদি এককেন্দ্রিক ব্যবস্থায় মন্ত্রণালয় পর্যায়ে খুঁটিনাটি বহু কাজ সম্পাদন করা হয়। ক্ষমতার প্রত্যর্পণ (ডেলিগেশন) বিবেচনায় দেশে বিশাল জনসংখ্যার পরিষেবা ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করার লক্ষ্যে দেশের পুরাতন চারটি বিভাগের সীমানাকে চারটি প্রদেশে বিভক্ত করে প্রাদেশিক শাসন ব্যবস্থা চালু করা যেতে পারে। এর ফলে এককেন্দ্রিক সরকারের পক্ষে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার সুযোগ হ্রাস পাবে। পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা শহরের ওপর চাপ হ্রাস পাবে।

রাজধানী ঢাকাকে কেন্দ্রশাসিত একটি ‘ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট’ গঠন করা নিয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশে বলা হয়, রাজধানী ঢাকা মহানগরীর জনসংখ্যা ও পরিষেবার ব্যাপ্তির কথা বিবেচনায় রেখে দিল্লির মতো ফেডারেল সরকার নিয়ন্ত্রিত ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্ট বা রাজধানী মেয়াদি মহানগর সরকার (Capital City Government) গঠনের সুপারিশ করা হলো। অন্যান্য প্রদেশের মতো এখানেও নির্বাচিত আইন সভা ও স্থানীয় সরকার থাকবে। ঢাকা মহানগরী, টঙ্গি, কেরানীগঞ্জ, সাভার ও নারায়ণগঞ্জকে নিয়ে ক্যাপিটাল সিটি গভর্নমেন্টের আয়তন নির্ধারণ করা যেতে পারে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব সংস্কার করতে অনেক সময় লাগবে। তাই বেশিরভাগ সুপারিশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের ওপরই ছেড়ে দিতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর ঢাকা পোস্টকে বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কারের যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে তার বাস্তবায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি ব্যাপার। এর বেশিরভাগ নির্বাচিত সরকারের হাতেই ছেড়ে দিতে হবে আর মৌলিক সংস্কারগুলো বর্তমান সরকার দ্রুত গতিতে করলে এগুলো ছয় মাসের মধ্যেই করা সম্ভব।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর মতে, আমরা স্বল্প মেয়াদি কিছু সুপারিশ করেছি যেগুলো ছয় মাসের মধ্যে করা যাবে, মধ্য মেয়াদি কিছু সুপারিশ করেছি যেগুলো এক থেকে দুই বছরের মধ্যে করা যাবে। দীর্ঘমেয়াদি কিছু সুপারিশ আছে যেগুলো পরবর্তী সময়ে ক্রমান্বয়ে দেখা যেতে পারে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠন করা হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন। সেগুলো হলো– নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।

এরপর গত নভেম্বরে আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। সেগুলো হলো– স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রম অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

ইতোমধ্যে অধিকাংশ কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনাও করছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রংপুর অনলাইন জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক কমিটি গঠন

খালেদা জিয়া ৬ মে সকালে ঢাকায় ফিরছেন, বিমানবন্দরে নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে যানজটের আশঙ্কা

জনপ্রশাসন সংস্কার বড় রূপান্তরের দায়িত্ব পড়বে নির্বাচিত সরকারের ওপর

জামায়াতের নিবন্ধন ফিরে পেতে আপিল শুনানি এ সপ্তাহে

বেঙ্গালুরু থ্রিলারে জিতে প্লে-অফে একধাপ এগিয়ে

বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যায় হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ

৫ মে পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদে অধিবেশন, ভারতের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব উত্থাপনের পরিকল্পনা

এই খাবারগুলো গরম করলে শরীরে তৈরি হতে পারে বিষ!

সামাজিক খাতে বরাদ্দ কমিয়ে প্রতিরক্ষায় খরচ বাড়াতে চান ট্রাম্প

এমি অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেলেন পাকিস্তানি নির্মাতা মোহাম্মদ আলি নকভি

১০

পাক-ভারত টানাপোড়েনে প্রশ্নের মুখে এশিয়া কাপ

১১

পাক-ভারত উত্তেজনা নিয়ে সতর্ক করলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট

১২

সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ১৭,৬৯৪ হজযাত্রী

১৩

জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি,হামাসের প্রতি লেবাননের কঠোর সতর্কবার্তা

১৪

সেনাপ্রধান রাষ্ট্রীয় সফরে কাতার

১৫

ইপিএল  ডি ব্রুইনের গোলে ম্যানচেস্টার সিটি তৃতীয় স্থানে

১৬

হজ করার উদ্দেশ্যে সৌদিতে পৌঁছেছেন ১৭৬৯৪ হজযাত্রী

১৭

হেফাজতের মহাসমাবেশ শুরু

১৮

ফারাক্কা বাঁধের ৫০ বছর: টিকে থাকবে আর কতদিন?

১৯

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় ৩১ ফিলিস্তিনি নিহত

২০