কানাডার নবনির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কেবল নিজেদের শর্তেই আলোচনা করবে, ট্রাম্প প্রশাসনের শর্তে নয়।” যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন।
কার্নি আরও বলেন, “যখন কোনো গুরুতর আলোচনা হবে এবং সেটি আমাদের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে হবে, তখনই আমি ওয়াশিংটন সফর করবো।”
কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর জানিয়েছে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর মার্ক কার্নি ও ডোনাল্ড ট্রাম্প ফোনে কথা বলেছেন এবং নিকট ভবিষ্যতে সরাসরি সাক্ষাৎ করতেও সম্মত হয়েছেন। উভয় নেতা পারস্পরিক উন্নয়নের স্বার্থে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে একসঙ্গে কাজ করার গুরুত্বে একমত হয়েছেন। ট্রাম্প কার্নিকে নির্বাচন জয়ের জন্য অভিনন্দনও জানিয়েছেন।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর কয়েকবার কানাডাকে ‘আমেরিকার ৫১তম রাজ্য’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। সর্বশেষ হোয়াইট হাউসের উপ-মুখপাত্র আন্না কেলিও বলেন, “কানাডাকে ৫১তম রাজ্য করার পরিকল্পনায় নির্বাচনের ফল প্রভাব ফেলবে না।” এই বক্তব্য কানাডার মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
কার্নি এসব মন্তব্যকে স্পষ্টভাবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, “এটা কখনোই হবে না। আমি মনে করি, অন্যকে অসম্মান করে এ ধরনের সম্পর্ক গড়ে তোলা সম্ভব নয়—তা সে পানামা হোক বা গ্রিনল্যান্ড।”
যুক্তরাষ্ট্র কানাডার সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার, যেখানে কানাডার প্রায় ৭৫ শতাংশ রপ্তানি পণ্য যায়। অথচ যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় রপ্তানি হয় মাত্র ১৭ শতাংশ। ২০২৪ সালে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৪৫ বিলিয়ন ডলারে।
ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার বিভিন্ন পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিল। পাল্টা জবাবে কানাডাও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে।
কার্নি বলেন, “এটি হবে একটি পারস্পরিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব। অতীতে যেমনটি ছিল, এবারেরটা হবে ভিন্ন।”
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে কার্নি কোনো রাজনৈতিক পদে ছিলেন না। তবে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক মন্দার সময় তিনি ব্যাংক অফ কানাডার গভর্নর ছিলেন এবং ২০১৩-২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের প্রথম বিদেশি গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার মতে, এই অভিজ্ঞতা ট্রাম্পের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনায় কানাডাকে সঠিকভাবে প্রতিনিধিত্ব করতে সহায়তা করবে।
তিনি আরও বলেন, “আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ৪০টিরও বেশি রাজ্যের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। আমরা তাদের জ্বালানি সরবরাহ করি, কৃষকদের জন্য সার সরবরাহ করি। তাই সম্মান প্রত্যাশা করাটাই স্বাভাবিক। আমি নিশ্চিত আমরা সেটা ফের অর্জন করবো এবং তারপর আলোচনায় বসা যাবে।”
কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। প্রতিদিন কয়েক বিলিয়ন ডলারের পণ্য আদান-প্রদান হয়। কিন্তু সাম্প্রতিক শুল্ক আরোপ এই সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের সঙ্গে উত্তেজনার পাশাপাশি ট্রাম্প মিত্র দেশগুলোর সঙ্গেও চাপ সৃষ্টি করেছেন। তবে কার্নি মনে করেন, বাণিজ্য বৈচিত্র্য আনতে যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং সমমনা দেশগুলোর সঙ্গে নতুন অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
কার্নি জানান, আগামী জুনে কানাডায় অনুষ্ঠিতব্য জি-৭ সম্মেলন হবে বৈশ্বিক বাণিজ্য নীতির গতিপথ নির্ধারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ মঞ্চ। তিনি বলেন, “এটি আসলে একটি পরীক্ষা—বিশ্বের শীর্ষ সাত অর্থনীতির দেশ এখনো সমমনা রয়েছে কি না, সেটিই দেখা যাবে এখানে।”
মন্তব্য করুন