ক্যানসার— আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ। তবে যুগান্তকারী অগ্রগতির ফলে আজ ক্যানসার চিকিৎসায় আমরা অনেকদূর এগিয়েছি। এই উন্নতির একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো রেডিওথেরাপি, যা বর্তমানে ক্যানসার চিকিৎসার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তবুও, অনেকের মনে এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে এখনো নানা ভ্রান্ত ধারণা ও অমূলক ভয় কাজ করে। চলুন জেনে নিই রেডিওথেরাপি নিয়ে প্রচলিত কিছু ভুল ধারণা এবং বাস্তবতা।
বাস্তবতা: এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আধুনিক রেডিওথেরাপি ক্যানসার কোষকে লক্ষ্য করে নির্ধারিত মাত্রায় রশ্মি প্রয়োগ করে, আশপাশের সুস্থ কোষকে যতটা সম্ভব নিরাপদ রাখে। চিকিৎসাটি সুনির্দিষ্ট, নিরাপদ ও নিয়ন্ত্রিত।
বাস্তবতা: আধুনিক প্রযুক্তি যেমন IMRT বা VMAT ব্যবহারে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বেশিরভাগ রোগী চিকিৎসার সময় স্বাভাবিক জীবনযাপন চালিয়ে যেতে পারেন।
বাস্তবতা: রেডিওথেরাপি কেবলমাত্র শেষ পর্যায়ে নয়, প্রাথমিক স্তর থেকেই প্রয়োগযোগ্য। অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে, কেমোথেরাপির সাথে সমন্বয়েও ব্যবহার হয় এবং অনেক ক্ষেত্রেই এটি ক্যানসার সম্পূর্ণ নিরাময়ে সহায়তা করে।
বাস্তবতা: রোগ পুনরায় দেখা দিলে আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে আবার রেডিওথেরাপি দেওয়া সম্ভব, যাকে বলা হয় Re-Irradiation।
বাস্তবতা: চুল পড়ে কেবল তখনই, যখন মাথা বা মস্তিষ্কে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়। শরীরের অন্য অংশে প্রয়োগ করলে মাথার চুল পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রেই চুল পরে আবার গজিয়ে ওঠে।
বাস্তবতা: যদিও সব ক্যানসারে রেডিওথেরাপি দরকার পড়ে না, কিন্তু স্তন, জরায়ুমুখ, ফুসফুস, গলা, মস্তিষ্ক ও প্রোস্টেট ক্যানসারে এটি অত্যন্ত কার্যকর।
বাস্তবতা: এটি সত্য যে রেডিওথেরাপি ব্যয়বহুল, তবে বর্তমানে অনেক সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং করপোরেট সেক্টরে সাশ্রয়ী মূল্যে এ সেবা দেওয়া হচ্ছে। অনেকেই এটি জানেন না।
রেডিওথেরাপি নিয়ে অহেতুক ভয় বা ভুল ধারণা রোগীর চিকিৎসা গ্রহণে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই সময়মতো সঠিক তথ্য জানা, সচেতন হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়াই ক্যানসার মোকাবেলার মূল চাবিকাঠি।📧
ডা. আরমান রেজা চৌধুরী
সিনিয়র কনসালটেন্ট, রেডিয়েশন অনকোলজি, এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকা [email protected]
মন্তব্য করুন