সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে আরেকটি হতাশার অধ্যায় যুক্ত হতে চলেছে। চার দিনেই ভেঙে পড়েছে স্বাগতিকদের প্রতিরোধ, চা-বিরতির আগেই জিম্বাবুয়ে এগিয়ে গেছে জয়ের একেবারে দোরগোড়ায়। ১৭৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দিনশেষে জিম্বাবুয়ের সংগ্রহ ১১৭/২—জয়ের জন্য বাকি মাত্র ৫৭ রান, হাতে ৮ উইকেট।
এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য শুধু হতাশার নয়, ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষের এমন দাপট সামনে চরম লজ্জারও। টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগেই অনেক আশা ছিল, প্রতিপক্ষ ছিল র্যাংকিংয়ে নিচে থাকা জিম্বাবুয়ে। কিন্তু সেই জিম্বাবুয়েই এখন স্বাগতিকদের আত্মসমর্পণের মুখে ঠেলে দিয়েছে।
প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা ১৯১ রানেই গুটিয়ে যান। এরপর বোলারদের নিষ্প্রভতায় জিম্বাবুয়ে তোলে ২৭৩ রান—সেই লিডটাই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেয়। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটাররা কিছুটা প্রতিরোধ গড়লেও ২৫৫ রানে থেমে যান, জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৭৪ রানের।
ছোট লক্ষ্য হলেও বাংলাদেশের বোলারদের কিছুটা লড়াইয়ের প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু নতুন বলে নাহিদ রানা, মিরাজ কিংবা তাইজুল—কেউই রানে রাশ টানতে পারেননি। শুরু থেকেই আগ্রাসী মেজাজে খেলতে থাকে জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা। দুই ওপেনা রবেন ক্যারান ও ব্রায়ান বেনেট মিলে ৯৫ রানের ঝড়ো জুটি গড়ে জয়ের ভিত গড়ে দেন।
ক্যারান মেহেদীর বলে আউট হলেও, বেনেট ৫২ রানে অপরাজিত থেকে উইকেটে থিতু। তার সঙ্গে আছেন অভিজ্ঞ শন উইলিয়ামস, যিনি শুধু ম্যাচ শেষ করতেই নামেননি, মনে হচ্ছে বার্তা দিতেও এসেছেন—ঘরের মাঠে বাংলাদেশকেও যদি এইভাবে চাপে ফেলা যায়, তাহলে ক্রিকেট বিশ্বে জিম্বাবুয়ের গুরুত্ব কতটা বাড়তে পারে।
বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটা নিছক এক টেস্ট হার নয়—এটা আত্মবিশ্বাসের চরম ভাঙন, পরিকল্পনায় ব্যর্থতা, নেতৃত্বে দুর্বলতা এবং সবচেয়ে বড় কথা, ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষকে সম্মান জানানোর দুঃসহ বাস্তবতা।
টেস্ট ক্রিকেটে ঘুরে দাঁড়ানোর সময় হয়তো সামনে আসবে, কিন্তু এই হার—যদি শেষ অবধি নিশ্চিত হয়—তা অনেক প্রশ্নের জন্ম দেবে: ঘরের মাঠে টেস্টে কেমন দল নির্বাচন হলো? বোলারদের কীভাবে এত নিষ্প্রভ করে ফেলল এই পিচ? ব্যাটারদের টেকনিক ও মানসিক দৃঢ়তা কই?
বাংলাদেশের সামনে এখন চূড়ান্ত বিপর্যয়ের অপেক্ষা। একটি দিন বাকি থাকলেও এই ম্যাচের রূপরেখা অনেকটা লেখা হয়ে গেছে। লড়াই নয়, বরং লজ্জা থেকে কিছুটা সম্মান বাঁচানোর শেষ চেষ্টা এখন টাইগারদের কাছে একমাত্র আশ্রয়।
মন্তব্য করুন