ভরা আমন মৌসুমে কুড়িগ্রামে দেখা দিয়েছে সার সংকট। জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। কিন্তু সার নিয়ে তৈরি হয়েছে চরম সংকট। কৃষকরা দোকান থেকে দোকানে ঘুরেও পাচ্ছেন না প্রয়োজনীয় সার। আর যে সামান্য সার পাওয়া যাচ্ছে, তাও কিনতে হচ্ছে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে। এতে কৃষকরা পড়েছেন মহাবিপাকে। তবে জেলা কৃষি বিভাগ বলছে, পর্যাপ্ত সার আছে যা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে।
সরকারি নির্ধারিত দামে ৫০ কেজি ইউরিয়া সারের বস্তা বিক্রির কথা ১ হাজার ৩৫০ টাকা। ডি.এ.পি ১ হাজার ৫০ টাকা, টি.এস.পি ১ হাজার ৩৫০ টাকা এবং পটাশ ১ হাজার টাকা। অথচ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশিতে। এতে কৃষকদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যাচ্ছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার কৃষক আব্দুল জলিল (৫০) ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমরা কৃষকরা সার ছাড়া ফসল চাষ করতে পারি না। সরকার যে দাম বেঁধে দিয়েছে, সেই দামে কোথাও সার পাওয়া যায় না। দোকান থেকে দোকান ঘুরে শেষে যা পাই, তা বাড়তি দামে কিনতে হয়। এক বস্তা ইউরিয়ার জন্য আমাকে ১ হাজার ৫০০ টাকা দিতে হয়েছে। এতে জমি চাষের খরচ বেড়ে যাচ্ছে, লাভ তো দূরের কথা, পুঁজি ফেরত পাওয়া নিয়েও চিন্তা করতে হচ্ছে।
কৃষক সেলিম মিয়া (৪৫) বলেন, ভরা আমন মৌসুম চলছে। ধানের গাছ বড় হচ্ছে, এখন যদি সার না দেই, তবে ধানের ফলন কমে যাবে। কিন্তু আমরা সারের জন্য দৌড়াদৌড়ি করছি। কেউ সঠিক দামে সার দিচ্ছে না। আবার চাহিদা অনুযায়ীও মিলছে না। এতে আমন মৌসুমেই আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।
খুচরা সার ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ডিলাররা তাদের যথাযথভাবে সার দিচ্ছেন না। ফলে দোকানগুলোতে পর্যাপ্ত সার থাকছে না। কৃষকরা তাদের কাছ থেকে সার চাইলে তারাও চাহিদা মতো দিতে পারছেন না।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার এক ডিলার জুলহাস হোসেন জানান, আমরা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে সার দিচ্ছি না। সরাসরি কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে সার দিচ্ছি। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত সার মজুদ আছে। তবে কৃষকরা একসঙ্গে বেশি সার চাইছে, এজন্য সবার চাহিদা অনুযায়ী দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
কৃষি প্রধান কুড়িগ্রাম জেলার অধিকাংশ মানুষ কৃষিকাজের ওপর নির্ভরশীল। আবার এই জেলা দারিদ্র্যের শীর্ষে এবং নদী ভাঙনের কারণে প্রতিবছরই হাজারো কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তার ওপর সার সংকট কৃষকদের জন্য নতুন দুঃশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ বছর বন্যা ও বৃষ্টপাত কম হবার কারণে চরাঞ্চলে রোপা আমনের আবাদ বেড়ে যায়। আমন ধানের আবাদ বেড়ে যাওয়ায় সারের চাহিদা বেড়ে যায়। তবে বর্তমান সারের কোন সংকট নেই। প্রতিটি পয়েন্টে আমাদের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে কৃষকদের সার সুষ্ঠভাবে বিতরণ করা হচ্ছে। তিনি কৃষকদের অনুরোধ করেন প্রাপ্তির তথ্য ও অভিযোগ জেলা কর্মকর্তাদের জানাতে।
স্থানীয় কৃষকরা মনে করেন, সঠিক দামে ও পর্যাপ্ত সার সরবরাহ করা হলে কৃষিতে আবারো সুদিন ফিরবে।
মন্তব্য করুন