রাজশাহীতে এখন ভরা আমনের মৌসুম চলছে। কৃষকরা আমন চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কিন্ত মৌসুমের শুরুতে নির্ধারিত দামে মিলছে কোনো সার। কৃষকদের অভিযোগ, ডিলাররা সিন্ডিকেট করে আগাম সার মজুত করায় রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকায় চলছে সার সংকট। পাশাপাশি মাছ চাষিরাও বিপুল পরিমাণ সার কিনে পুকুরে দিচ্ছেন। আবার সার বিভিন্ন উপজেলায় পাচারও করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে তাদের।
বরেন্দ্র এলাকার কৃষকরা আমনের জমি তৈরির কাজ চলছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে রোপণ করা হবে আমন। জমি তৈরির সময় ইউরিয়া টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারের প্রয়োজন হচ্ছে। বিশেষ করে তানোর, গোদাগাড়ী, পবা, মোহনপুর, দুর্গাপুর, বাগমারা ও পুঠিয়ায় ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। আবার আমনের জমি তৈরিতেও ইউরিয়া ও নন-ইউরিয়া সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তবে ভর্তুকির এসব সার শুধু কৃষকের কাছে বিক্রির নির্দেশ থাকলেও সরকারি নিয়ম ডিলার ও উপ-ডিলাররা মানছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া যথাযথ মনিটরিং না হওয়ায় এক এলাকার সার আরেক এলাকায় পাচার হয়ে যাচ্ছে।
জানা গেছে, ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপির সরকারি দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা হলেও রাজশাহীর বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। একইভাবে এক হাজার ৫০ টাকা বস্তার ডিএপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। এক হাজার ৩৫০ টাকা বস্তার ইউরিয়া বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় এবং এক হাজার টাকা বস্তার এমওপি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা। ডিলারদের কাছে সার না পেয়ে কৃষকরা খোলাবাজার থেকে এসব সরকারি সার চড়ামূল্যে কিনছেন।
এদিকে সরকারি নির্ধারিত দামে সার না পাওয়া বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোদাগাড়ী উপজেলার কৃষকরা। তারা গত বৃহস্পতিবার ডিলারের লাইসেন্স বাতিলের দাবি জানান। সমাবেশে তারা বলেন, বিসিআইসির ডিলার তাদের সরকার নির্ধারিত দামে সার দেন না। বেশি টাকা দিলে সার দেন, তা না হলে ফিরিয়ে দেন। আটকে রাখা সার তিনি পাচার করে দেন অন্য উপজেলায়।
পবা উপজেলার আলিমগঞ্জের কৃষক মোক্তার আলম জানান, ইউরিয়া সার ৩০ টাকা কেজি দরে কিনেছেন তিনি। ইউরিয়া সার ১ হাজার ৬০০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। আর টিএসপি সার বিক্রি হচ্ছে ১৩০০০ টাকা বস্তা। অন্য বছরের তুলনায় খুচরা পর্যায়ে এবার সারের দাম বেশি নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়াতে ২১ টাকা, ডিএপিতে ৪৯ টাকা, টিএসপিতে ২৩ টাকা এবং এমওপিতে ৪০ টাকা ভর্তুকি দিয়ে আসছে। কিন্তু মনিটরিংয়ের অভাবে চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, অসাধু ডিলাররা বাফার থেকে সার উত্তোলন করে নিজ এলাকায় না নিয়ে চাহিদা বেশি আছে সেসব এলাকায় পাচার করছেন। বিশেষ করে টিএসপি ও ডিএপি সার পেতে কৃষকদের হয়রানি হতে হচ্ছে।
চারঘাট উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন হাসান বলেন, সরকার নির্ধারিত সারের দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। কোন অনিয়ম পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এছাড়াও গেল বুধবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সার পাচারের অভিযোগে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।
রাজশাহী সার ও বীজ মনিটরিং কমিটি সূত্রে জানা গেছে, গুদাম থেকে সার উত্তোলনের পর ডিলার নিজ নিজ গুদামে নিয়ে যাবেন। উপজেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সদস্য সচিব উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা যৌথভাবে গুদাম পরিদর্শন ও নথিপত্র যাচাই করবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে মনিটরিং কমিটি সারের বস্তার ওপর ‘ভর্তুকির সার’ লিখে দেবেন। সার বিক্রির সময় ডিলার ক্রেতা বা কৃষককে রশিদ দেবেন এবং কৃষকের ফোন নম্বর লিখে রাখবেন বিক্রি রেজিস্টারে। কিন্তু রাজশাহীতে এ নির্দেশনা ডিলাররা যেমন মানছেন না তেমনি মনিটরিং কমিটিও সরকারি নির্দেশনা কার্যকরে তৎপর নয়।
এছাড়া সার বিতরণ নীতিমালায় কৃষি খাত ছাড়া অন্য কোনো প্রয়োজনে সার বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু রাজশাহীতে মাছ চাষিরা প্রতি মৌসুমে বিপুল পরিমাণ সার ব্যবহার করে মাছ চাষ করছেন। কৃষকরা বলছেন, রাজশাহীতে সারের দুর্বল মনিটরিং ব্যবস্থার কারণে কৃষকরা সার সংকটে পড়ছেন।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, রাজশাহীতে পর্যাপ্ত সার মজুত রয়েছে। কোথাও সার সংকট নেই। যথাযথভাবে সার উত্তোলন ও মজুত মনিটরিং করা হচ্ছে।এই বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।#
মন্তব্য করুন