ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল চত্বরে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর নিয়ে পিটিয়ে হত্যার মর্মান্তিক ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও রাজনৈতিক সহিংসতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।
এই প্রসঙ্গে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টক শোতে আলোচনায় অংশ নেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, সাংবাদিক সোহরাব হাসান ও বিএনপির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল। আলোচনায় উঠে আসে বাংলাদেশের সমাজ ও রাজনীতির নৈতিক অধঃপতনের চিত্র।
সাংবাদিক সোহরাব হাসান বলেন, “একবিংশ শতাব্দীতে এ ধরনের বর্বরতা আমরা কল্পনাও করতে পারিনি। আশেপাশে আনসার ক্যাম্প থাকা সত্ত্বেও কেউ সাহায্যে এগিয়ে আসেনি। এটি শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, সমাজের মূল্যবোধের চূড়ান্ত পতনের ইঙ্গিত।” তিনি আরও যোগ করেন, “আইনের শাসন এখন কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। চাঁদপুরে ইমামের ওপর হামলা, খুলনায় যুবদল নেতাকে আক্রমণ—এসব ঘটনা প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় কাঠামো দুর্বল এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।”
বিএনপির তথ্য সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল ঘটনাটির তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “আমরা দ্রুত অভিযুক্তদের দল থেকে বহিষ্কার করেছি। কিন্তু ভিডিও প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করছে না, যা প্রশাসনের ব্যর্থতা।” বিএনপির মধ্যে কিভাবে সন্ত্রাসীরা ঢুকে পড়ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে হেলাল দাবি করেন, “আমরা অপরাধীদের আশ্রয় দিই না। সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে বিএনপিকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করছে। অপরাধীদের না ধরে আমাদের ওপর দায় চাপানো হচ্ছে।”
গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি রাজনীতির বর্তমান সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, “বর্তমান রাজনীতি আদর্শহীন, শুধু ক্ষমতা দখলের লড়াই। স্থানীয় চাঁদাবাজি, সিন্ডিকেটের সঙ্গে দলের যোগসাজশ সহিংসতাকে উসকে দিচ্ছে। মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড তারই প্রতিফলন।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “রাজনীতিকে পেশাদার করতে হবে, দলগুলোর অভ্যন্তরে জবাবদিহিতা বাড়াতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার জন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তারা সঠিকভাবে কাজ করতেন।”
এই আলোচনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামাজিক অবক্ষয়ের গভীর সংকটকে ফুটিয়ে তোলে, যা রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
মন্তব্য করুন