বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত নেটফ্লিক্স ডকুসিরিজ ‘টার্নিং পয়েন্ট: দ্য বম্ব অ্যান্ড দ্য কোল্ড ওয়ার’-এ প্রযোজক হিসেবে কাজ করে এমি অ্যাওয়ার্ডে মনোনয়ন পেয়েছেন পাকিস্তানি নির্মাতা মোহাম্মদ আলি (মো) নকভি।
২ মে (শুক্রবার) জিও টিভির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
‘আউটস্ট্যান্ডিং হিস্টোরিক্যাল ডকুমেন্টারি’ বিভাগে মনোনয়ন পাওয়া এই সিরিজটি ইতিহাসভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ বিশ্লেষণ ও বর্ণনার জন্য ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাপী আলোচিত হয়েছে। সিরিজটি পরিচালনা করেছেন ব্রায়ান ন্যাপেনবার্গার এবং প্রযোজনা করেছে লুমিন্যান্ট মিডিয়া।
এই মনোনয়নের মধ্য দিয়ে মো নকভি নিজেকে এমি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি মনোনয়নপ্রাপ্ত পাকিস্তানি নির্মাতাদের একজন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করলেন। এর আগে তিনি ২০২৩ সালে ‘দ্য অ্যাকিউজড: ড্যামন্ড অর ডিভোটেড?’ ডকুমেন্টারির জন্য প্রাইমটাইম এমি মনোনয়ন পেয়েছিলেন। এছাড়া ২০০৮ সালে তার নির্মিত ‘শেইম’ ডকুমেন্টারি অর্জন করে টেলিভিশন একাডেমি অনার, যা ছিল পাকিস্তানি নির্মাতাদের জন্য প্রথম সম্মাননা।
৯ পর্বের ‘টার্নিং পয়েন্ট’ সিরিজে ঠাণ্ডা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট, এর প্রতিক্রিয়া এবং আধুনিক বিশ্বের সংকটের সঙ্গে এর সম্পর্ক তুলে ধরা হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি, যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার, ন্যাটো মহাসচিব জেন্স স্টলটেনবার্গ, সিআইএ’র সাবেক পরিচালক রবার্ট গেটস, এবং যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী কনডোলিজা রাইসসহ বিশ্ব রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বরা।
নেটফ্লিক্সে মুক্তির পর সিরিজটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায় এবং প্রথম কয়েক সপ্তাহেই ৬২১ মিলিয়নের বেশি মিনিট দেখা হয়, যা একে প্ল্যাটফর্মের শীর্ষ ডকুসিরিজগুলোর মধ্যে স্থান করে দেয়।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে মোহাম্মদ নকভি বলেন, “এই সিরিজ শুধু ইতিহাসের পুনর্কথন নয়, বরং বিশ্লেষণ করে কীভাবে বিশ্ব শক্তিগুলো আধুনিক বাস্তবতাকে নির্মাণে প্রভাব ফেলেছে।”
তিনি বিশেষভাবে উল্লেখ করেন ১৯৫৩ সালে ইরানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেককে সিআইএ’র মাধ্যমে উৎখাত, গুয়াতেমালায় মার্কিন-সমর্থিত সরকার পতন, এবং দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকায় প্রক্সি যুদ্ধের প্রভাব।
তার ভাষায়, “ইতিহাস কেবল অতীত নয়, এটি আমাদের বর্তমানের নকশা।”
বর্তমানে মোহাম্মদ নকভি হলেন অ্যাকাডেমি অব মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর সদস্য, পাকিস্তান একাডেমি সিলেকশন কমিটির চেয়ারম্যান, এবং ক্রিসেন্ট কালেকটিভ-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা। তিনি ২০২৫ সালের জন্য কনকর্ডিয়া ফেলো হিসেবেও মনোনীত হয়েছেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেন, “আমি নিজেকে কেবল একজন নির্মাতা হিসেবে দেখি না, বরং এমন একজন হিসেবে দেখি, যিনি অন্যদের জন্য জায়গা তৈরি করছেন। যদি আমার কাজ কোনো তরুণ পাকিস্তানি নির্মাতার জন্য দরজা খুলে দেয়, তাহলে আমার প্রতিটি প্রচেষ্টা সার্থক।”
মন্তব্য করুন