বর্তমান বিশ্বের বহুমুখী সংকট—মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, ইউক্রেন যুদ্ধ, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অনিশ্চয়তা এবং এশিয়ায় চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব—এসব প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সামরিক বাজেটে বড় ধরনের বরাদ্দ ঘোষণা করেছে। মার্কিন কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (CBO) জানায়, ২০২৫ থেকে ২০৩৪ সালের মধ্যে পারমাণবিক সামরিক শক্তি রক্ষণাবেক্ষণ ও আধুনিকীকরণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৯৪৬ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করবে।
এই বাজেটের বার্ষিক গড় ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৯৫ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে প্রায় ৩৫৭ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বিদ্যমান পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার রক্ষণাবেক্ষণে। অস্ত্র ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নে বরাদ্দ ৩০৯ বিলিয়ন ডলার, নির্দেশনা, নিয়ন্ত্রণ ও সতর্কীকরণ ব্যবস্থায় ৭৯ বিলিয়ন, গবেষণায় ৭২ বিলিয়ন, এবং সম্ভাব্য অতিরিক্ত খরচের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়েছে ১২৯ বিলিয়ন ডলার।
যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক শক্তির তিনটি মূলভিত্তি হলো—পারমাণবিক চালিত সাবমেরিন, ভূমি থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM) এবং বোমারু বিমান। এই ‘নিউক্লিয়ার ত্রয়ী’ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার অন্যতম স্তম্ভ।
বিশ্বের পারমাণবিক ওয়ারহেড পরিসংখ্যান (স্ট্যাটিস্টা, ২০২৪) অনুযায়ী, বিশ্বের মোট ১২,১২১টি ওয়ারহেডের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের দখলে রয়েছে ৫,০৪৪টি, রাশিয়ার প্রায় ৫,৮০০টি, এবং চীনের আছে ৫০০টির বেশি, যা দ্রুত বাড়ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিপুল বাজেট শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্যই নয়, বরং এটি একটি কৌশলগত বার্তা। রাশিয়া ও চীনের আধুনিকীকরণ প্রতিযোগিতার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপকে অনেকেই ক্ষমতা প্রদর্শনের মাধ্যম হিসেবেও দেখছেন। অন্যদিকে, শান্তিকামী মহল প্রশ্ন তুলছে—এই অর্থ যদি শিক্ষা, স্বাস্থ্য বা জলবায়ু খাতে ব্যয় হতো, তবে তা মানব কল্যাণে আরও বড় প্রভাব ফেলতে পারত।
পরিশেষে বলা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং বৈশ্বিক রাজনীতিতে একটি স্পষ্ট ঘোষণা—যুদ্ধ নয়, কিন্তু প্রস্তুতি সর্বদা থাকতে হবে।
মন্তব্য করুন