ইসরাইলের গাজা আগ্রাসন ও মার্কিন হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরাইলি বিমানবন্দর ও মার্কিন রণতরীকে লক্ষ্যবস্তু করেছে। এতে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ও মার্কিন রণতরীতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে ইয়েমেনি সেনাবাহিনী।
সোমবার রাতে ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছেন। মেহের নিউজ এই খবর প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে ইয়াহিয়া সারি জানান, সোমবার রাতে ইয়েমেনের সশস্ত্র বাহিনী ইসরাইলের দখলকৃত ইয়াফা অঞ্চলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর মধ্যে ছিল—
জুলফিকার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র
সুপারসনিক ‘প্যালেস্টাইন-২’ ক্ষেপণাস্ত্র
তিনি আরও বলেন,
“গাজায় ফিলিস্তিনিদের ওপর চলমান ইসরাইলি আগ্রাসনের প্রতিশোধ নিতে এবং সংহতি প্রকাশের অংশ হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে।”
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ইয়াহিয়া সারি জানান,
“ইয়েমেনি বাহিনী লোহিত সাগরে অবস্থান করা মার্কিন রণতরী ‘হ্যারি এস ট্রুম্যান’ এবং তার সঙ্গে থাকা কয়েকটি যুদ্ধজাহাজের ওপর একাধিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালিয়েছে।”
তার দাবি, এটি ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে মার্কিন যুদ্ধজাহাজের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলা।
ইয়েমেনি সেনাবাহিনীর মুখপাত্র হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন,
“ইয়েমেনি সশস্ত্র বাহিনী দখলদার ইসরাইলের বিরুদ্ধে সামুদ্রিক অভিযান অব্যাহত রাখবে এবং ইসরাইলি ভূখণ্ডে হামলাও অব্যাহত থাকবে, যতক্ষণ না গাজার অবরোধ তুলে নেওয়া হয় এবং হামলা বন্ধ হয়।”
ইয়েমেনি সংবাদ সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, সোমবার মার্কিন যুদ্ধবিমান ইয়েমেনের সা’দা প্রদেশের আল-রাসুল আল-আজম অনকোলজি হাসপাতালে দুটি বিমান হামলা চালিয়েছে।
এই নিয়ে এক সপ্তাহের ব্যবধানে একই হাসপাতালে ১৩টি বিমান হামলা চালালো আমেরিকা।
এর আগে, গত ১৫ মার্চ মার্কিন বিমান হামলায় ৫৩ জন ইয়েমেনি নিহত হন।
ইয়েমেনের ক্যানসার কন্ট্রোল ফান্ড এই হামলাকে “অমানবিক যুদ্ধাপরাধ” হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং জাতিসংঘ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও রেড ক্রসকে দ্রুত হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, ইয়েমেনে ‘অবিরত সামরিক অভিযান’ পরিচালনা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, ইয়েমেনি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিক্রিয়ায় দ্বিতীয় মার্কিন রণতরী ‘ইউএসএস কার্ল ভিনসন’ মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে, ইয়েমেনি বাহিনী হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছে,
“মার্কিন ও ইসরাইলি আগ্রাসন চলতে থাকলে আমরা আরও কঠোর প্রতিক্রিয়া দেখাব।”
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।
ইসরাইলের গাজা আগ্রাসনের প্রতিক্রিয়ায় ইয়েমেনি বাহিনী সরাসরি হামলা চালাচ্ছে।
মার্কিন রণতরীর ওপর টানা দুই দিনের হামলা ও ইসরাইলি বিমানবন্দরে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নতুন মাত্রার সংঘাতের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্র পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে আরও সামরিক উপস্থিতি বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত আরও জটিল রূপ নিতে পারে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মন্তব্য করুন