পাকিস্তানের আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) প্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী দাবি করেছেন যে, বেলুচিস্তানে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেন হাইজ্যাকের মূল মদদদাতা ছিল ভারত। তিনি শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করেন।
এদিন বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতির সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী অভিযানের বিস্তারিত তুলে ধরেন এবং ভারতীয় গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগ আনেন।
১১ মার্চ, দুপুর ১টার দিকে কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে একটি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরিত হয়। এরপর ভারি অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সন্ত্রাসীরা পরিকল্পিতভাবে ট্রেনে হামলা চালায়। হামলার পর সন্ত্রাসীরা একাধিক দলে বিভক্ত হয়ে যাত্রীদের উপর হামলা করে, কিছু নারী ও শিশুকে মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে এবং অন্যদের জিম্মি করে পাহাড়ি অঞ্চলে নিয়ে যায়।
পাকিস্তানের ফ্রন্টিয়ার কর্পস (এফসি) এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের খতম করে এবং সকল জিম্মিকে উদ্ধার করে। এই অভিযানে কোনো বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটেনি, তবে অভিযান শুরুর আগে কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে।
আইএসপিআর প্রধান বলেন, হামলাকারীরা আফগানিস্তানে অবস্থিত তাদের হ্যান্ডলারদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিল এবং বিদেশি অস্ত্র ব্যবহার করছিল। তিনি বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সীমান্ত সন্ত্রাসী পরিকল্পনার অংশ।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে দিয়েছে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে ভুয়া ভিডিও তৈরি করে, যা ভারতীয় সংবাদ চ্যানেলগুলোতেও প্রচারিত হয়েছে।
বেলুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী মীর সরফরাজ বুগতি এই হামলার নিন্দা জানিয়ে বলেন, যারা বেলুচ জাতীয়তাবাদের নামে সন্ত্রাস চালায়, তাদের বেলুচ জনগণের সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর দক্ষ প্রতিক্রিয়ার প্রশংসা করেন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী পাকিস্তানের জাতীয় কর্মপরিকল্পনার কঠোর বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি উল্লেখ করেন, সন্ত্রাস নির্মূলে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল, যার মধ্যে রয়েছে:
🔹 সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা;
🔹 সন্ত্রাসের অর্থায়ন বন্ধ করা;
🔹 গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সন্ত্রাসী প্রচারণা প্রতিরোধ;
🔹 সন্ত্রাসবিরোধী তদন্তের গতি বাড়ানো;
🔹 মাদ্রাসা নিবন্ধন ও নিয়ন্ত্রণ।
তিনি জানান, ২০২৫ সালে পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ১১,৬৫৪টি অভিযান পরিচালনা করেছে, যার মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ১৮০টি গোয়েন্দা ভিত্তিক অভিযান পরিচালিত হয়।
আফগানিস্তানের ভূমিকা
আইএসপিআর প্রধান দাবি করেন, আফগানিস্তান থেকে পরিচালিত সন্ত্রাসী কার্যক্রম পাকিস্তানে হামলার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
তার মতে:
🔸 আফগানিস্তানে সন্ত্রাসীদের প্রশিক্ষণ ও নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে;
🔸 মার্কিন বাহিনীর ফেলে যাওয়া অস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যবহার করছে;
🔸 আফগানিস্তান প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে শত্রু শক্তির প্রক্সি হিসেবে কাজ করছে।
তিনি জানান, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের অর্থায়নে চোরাচালানের ভূমিকা রয়েছে, যা পাকিস্তান সরকার কঠোরভাবে দমন করছে।
পাকিস্তান আইএসপিআর প্রধান এ সময় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ভারতকে পাকিস্তানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসে মদদ দেওয়ার জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনা হোক।
তার ভাষায়, “এটিই প্রথমবার নয় যে, পাকিস্তানের ভেতরে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। বিশ্বকে এ বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে হবে।”
১১ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টায় কোয়েটা থেকে ৪৪০ জন যাত্রী নিয়ে জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটি রওনা দেয়। গুদালার ও পেরু কানরি অঞ্চলে পৌঁছালে সন্ত্রাসীরা এতে হামলা চালায়। তারা প্রথমে গুলি চালায় এবং পরে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে ২১ জন যাত্রী ও সেনাসদস্য শহিদ হন।
পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দ্রুত অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসীদের পর্বতমালার দিকে ধাওয়া করে এবং জিম্মিদের নিরাপদে উদ্ধার করে।
লেফটেন্যান্ট জেনারেল আহমেদ শরীফ চৌধুরী বলেন, “পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী দেশের শত্রুদের বিরুদ্ধে সদা সতর্ক রয়েছে। পাকিস্তানকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় যারা লিপ্ত, তারা ব্যর্থ হবে। আমাদের জাতীয় ঐক্য বিজয়ী হবে।”
মন্তব্য করুন