ব্রহ্মপুত্রের করাল গ্রাস যেন শিশুদের ভবিষ্যৎ গিলে খেয়েছে। নদীভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে কুড়িগ্রামের চরাইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। একটিমাত্র টিনের চালার ঘরে চলছে ৬ শ্রেণির ‘যুদ্ধ’। কোথাও ক্লাস, কোথাও অফিস, কোথাও শিক্ষক, কোথাও সম্মান সব যেন এখন শরণার্থী।
১৮ মাস আগে ব্রহ্মপুত্রের ভাঙনে পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয় কুড়িগ্রামের রাজিবপুর উপজেলার মোহনগঞ্জ ইউনিয়নের চরাইহাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এখন স্কুল বলতে একটি একচালা টিনের ছাপড়ার ঘর, সেটিও স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক জাকিরের উঠানে তৈরি। নেই দরজা-জানালা, নেই টেবিল-চেয়ার, নেই শিক্ষকদের বসার জায়গা। অথচ এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২০।
স্কুলটি আশ্রয় দেওয়া জাকির বলেন, আমার নিজেরই থাকার জায়গা নাই তারপর আমার বাড়ির আঙিনায় যেটুকু জায়গা ছিল আমি আপাতত পড়া লেখাযাতে চালু থাকে তাই ঘর তুলতে দিয়েছি। সেখানে একটি শ্রেণীকক্ষে তারা ক্লাস নেয় স্যারদেরও কষ্ট হয় আমারও কষ্ট হয় শিক্ষার্থীরা কষ্ট হয় কবে যে সরকারের ব্যবস্থা নেবে আল্লাহ ই ভালো জানি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আসাদুজ্জামান বলেন, একটি মাত্র ঘরে এখন আমরা ৬টি শ্রেণির ক্লাস চালাতে বাধ্য হচ্ছি। যখন প্রথম শ্রেণির ক্লাস নেই, তখন বাকি শ্রেণির শিশুরা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে।
রোদ, বৃষ্টি বা শীত ও গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। শিক্ষা অফিসে জানানো হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
শিক্ষকদের বসার পর্যাপ্ত জায়গা নেই, টেবিল-চেয়ার নেই, নেই পাঠ্য উপকরণ রাখার স্থায়ী ব্যবস্থা। শিক্ষকরা চরম অসুবিধার মধ্যে দিন পার করছেন।
শিক্ষকের কোনো অফিস রুম না থাকায় এখন স্থানীয় একটি স্যান্ডেলের দোকানে বসে নথিপত্রের কাজ চালাতে হচ্ছে তাদের।
স্যান্ডেলের দোকানদার আব্দুল মান্নান স্বপন বলেন, বৃষ্টিতে স্যাররা বাইরে ভিজে দাঁড়িয়ে থাকেন। কষ্ট দেখে বললাম আমার দোকানে এসে বসেন। তখন থেকে আমি দোকান না খোলা পর্যন্ত স্যাররা বাইরে দাঁড়িয়ে থাকে। এটা আমাও লজ্জা লাগে স্যারেরাও লজ্জা পায়।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদিয়া, আরিফা, ওমর আলী বলে, আমরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারি না। বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি, বৃষ্টি এলে ভিজে যাই। পড়াও বুঝি না। আবার ফ্যান নাই গরমেও কষ্ট হয়। মাঠ নাই খেলাধুলা করতে পারিনা।মাইসে কয় ভাংগা স্কুলে পড়ি। আমাদের স্কুল কবে ঠিক হবে স্যার?
বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা জানান, স্কুলের অবকাঠামো নেই, অফিস নেই, শিক্ষকের সম্মান তো থাকবেই না। শিক্ষার দায়িত্ব নিতে গিয়ে আজ আমরা ভিক্ষুকের মতো অবস্থায়।
শফিকুল নামে এক অভিভাবক ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, অন্য স্কুলের শিক্ষার্থীরা যেখানে নিয়মিত পড়াশোনা করে বৃত্তির আশা। সেখানে আমাদের ছেলেমেয়েরা ক্লাস করার সুযোগই পায় না।
এ বিষয়ে রাজিবপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন বলেন, নদীভাঙনের পর জমি না থাকায় কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। কেউ জমি দিলে দ্রুত স্কুল নির্মাণে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজিবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলে এলাহী বলেন, বিদ্যালয়টি আমি পরিদর্শন করেছি। বিদ্যালয়টি নদীর গর্ভে বিলীন হওয়ার পর নতুন করে কোন জায়গা পাওয়া যায়নি। এই বিদ্যালয়ের ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবগত করেছি। এখনও কোন সহায়তা বা নির্দেশনা পাইনি।
মন্তব্য করুন