ঋতুর পালাবদলের ঘন্টা বেজে উঠেছে আজ। বর্ষার ভরা জলরাশি ও টানা বৃষ্টির দিনগুলোকে বিদায় জানিয়ে শুরু হলো শরৎকাল—বাংলা বর্ষপঞ্জির ষষ্ঠ ঋতু। ভাদ্র মাসের প্রথম প্রহর থেকেই আকাশ যেন নতুন রূপে আত্মপ্রকাশ করেছে। মেঘলা দিনের ভাঁজ মুছে নীল আকাশে সাদা মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। প্রকৃতির এ দৃশ্য যেন ঘোষণা করছে—আজ থেকে শুরু হলো শরতের যাত্রা।
শরৎ মানেই নীল আকাশ, তুলোর মতো মেঘ আর মাঠের প্রান্তরে শুভ্র কাশফুল। নদীর ধারে, গ্রামের বাঁশঝাড়ের পাশে কিংবা বিস্তীর্ণ চরভূমিতে কাশবন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকে। মৃদুমন্দ বাতাসে যখন কাশফুল দোল খায়, তখন মনে হয় প্রকৃতি নিজেই যেন হাসিমুখে ঋতুর আগমনকে স্বাগত জানাচ্ছে।
বর্ষার ভেজা মাটি শুকিয়ে আসে শরতের রোদে। তাপমাত্রা হয় আরামদায়ক, আর্দ্রতা কমে আসে, চারপাশের আবহাওয়া হয়ে ওঠে নির্মল ও স্বচ্ছ। দিনের আলো হয় উজ্জ্বল অথচ কোমল—যা শরৎকেই করে তোলে স্নিগ্ধ ও প্রশান্তির ঋতু।
বাংলা সাহিত্য ও কবিতায় শরৎ অনন্তকাল ধরে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে কবি-সাহিত্যিকদের। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতায় যেমন মেঘ-আকাশের খেলা এসেছে, তেমনি জীবনানন্দ দাশও লিখেছেন শরতের নক্ষত্র-ভরা আকাশের কথা। শরতের আলো-আঁধারিতে যে শান্ত সৌন্দর্য লুকিয়ে আছে, তা বহু কবিতায় ধরা দিয়েছে চিরন্তন রূপে।
কাশফুলের শুভ্রতা ও শরতের নির্মল আকাশ একদিকে শান্তির প্রতীক, অন্যদিকে তা বাঙালির মনোজগতে সৃষ্টি করে উৎসবের আবহ। শরৎ মানেই দুর্গাপূজার অপেক্ষা—ঢাকের শব্দ, উলুধ্বনি আর দেবীর আগমনী সুরে উৎসব মুখরিত হয়ে ওঠে বাংলার গ্রাম ও শহর। ফলে শরৎ কেবল প্রকৃতির ঋতু নয়, এটি বাঙালির প্রাণের উৎসবেরও ঋতু।
শরৎকালকে অনেকেই ‘আশীর্বাদের ঋতু’ বলেন। বর্ষার টানা বৃষ্টির পর কৃষকরা যখন মাঠে ফসলের পরিচর্যায় ব্যস্ত হন, তখন আকাশের স্বচ্ছতা ও আবহাওয়ার মাধুর্য তাদের মনে নতুন আশার আলো জ্বালায়। এসময় ধানের ক্ষেতে সবুজের সমারোহ দেখা যায়, যা কয়েক মাস পর সোনালি ফসলের রূপ নেবে। ফলে শরৎ শুধু সৌন্দর্যের নয়, জীবিকার সঙ্গেও জড়িয়ে আছে।
আজ শরতের প্রথম দিনে তাই বাংলার প্রকৃতি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পেয়েছে। বর্ষার ক্লান্তি কাটিয়ে নীল আকাশে ভাসছে সাদা মেঘের ভেলা, মাঠে মাঠে কাশফুলে ঢেউ তুলছে শরতের হাওয়া। কবির ভাষায়—“শরৎ এসেছে বলে, আকাশে মেঘেরা কেমন করে ভেসে চলে।” প্রকৃতির এই অনুপম সাজ কেবল চোখে নয়, মনে-প্রাণেও জাগায় প্রশান্তি ও আনন্দের স্রোত।
মন্তব্য করুন