আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্বিচার গুলি এবং গণগ্রেপ্তার করে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার নিজেকে রক্ষার মরিয়া চেষ্টা করছিল। এর মধ্যেই ২১ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের তৎকালীন পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ রায় দেন, সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে ৯৩ শতাংশ। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। এই নির্দেশনার আলোকে নির্বাহী বিভাগকে অবিলম্বে প্রজ্ঞাপন জারির নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ।
তবে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আন্দোলন তখন আর কোটা সংস্কারের দাবির মধ্যে ছিল না। দেশে তখন কারফিউর পাশাপাশি মাঠে ছিল সেনাবাহিনীও।
কিন্তু এর আগেই তাদের (বিগত সরকার) হাতে অনেক রক্ত লেগে গিয়েছিল। স্লোগান উঠেছিল ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইরে ফিরায়ে দে’।
১৯ জুলাই মধ্যরাতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার সারা দেশে কারফিউ জারি করেছিল। সেদিন দেশের বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে নিহত হন ১৭৭ জন। পরদিন ২০ জুলাই গুলিতে নিহত হন ৬৫ জন। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে কোটা সংস্কার নিয়ে আপিল বিভাগের রায় হলেও ছাত্র-জনতাকে নির্বিচার গুলি করে হত্যার প্রতিবাদে এবং বিচারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা জানায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
আপিল বিভাগের রায় ঘোষণার দিনও দেশের বিভিন্ন এলাকায় গুলি চালায় আইনশৃঙ্খলা
রক্ষাকারী বাহিনী, এতে বহু মানুষ হতাহত হন। এ ছাড়া সেদিন ভোরে ঢাকার পূর্বাচল এলাকায় গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন রাস্তার পাশে ফেলে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক (এখন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক) মো. নাহিদ ইসলামকে। এর আগে ১৯ জুলাই মধ্যরাতে খিলগাঁওয়ের নন্দীপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে তাঁকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাঁকে ব্যাপক নির্যাতন করেছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন।
তবে ছাত্র-জনতাকে গুলি করে নৃশংসভাবে হত্যার ঘটনায় আন্দোলন তখন আর কোটা সংস্কারের দাবির মধ্যে ছিল না। দেশে তখন কারফিউর পাশাপাশি মাঠে ছিল সেনাবাহিনীও।
২১ জুলাই কোটা সংস্কারের রায় দেওয়ার পর আন্দোলন কীভাবে এগোল—প্রথম আলোকে সেই দিনগুলোর কথা বলতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য আকরাম হুসাইন। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই থেকে ২০ জুলাই দেশজুড়ে গণহত্যা চালিয়েও আন্দোলন দমন করতে পারছিলেন না শেখ হাসিনা। ব্লক রেইড, গণগ্রেপ্তার, সমন্বয়কদের গুম করেও মানুষের প্রতিরোধ থামাতে পারছিলেন না। আনুষ্ঠানিকভাবে তখনো এক দফা ঘোষণা না হলেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তত দিনে শ্রমিকসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যুক্ত হন। সবাই রাস্তায় নেমে আসেন শেখ হাসিনার পতনের দাবিতে। শেষরক্ষার জন্য ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকার ২১ জুলাই আদালতের মাধ্যমে কোটা সংস্কারের রায় ঘোষণা করেছিল। কিন্তু এর আগেই তাদের (বিগত সরকার) হাতে অনেক রক্ত লেগে গিয়েছিল। স্লোগান উঠেছিল ‘তোর কোটা তুই নে, আমার ভাইরে ফিরায়ে দে’।
মন্তব্য করুন