ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিবের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বেন গুরিয়ন ইয়েমেনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে। রোববার (৪ মে) ভোরে এ হামলায় অন্তত দুই ইসরাইলি সেনা নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সূত্র। হামলার পর বিমানবন্দরের সব ধরনের ফ্লাইট বাতিল বা বিকল্প রুটে পাঠানো হয়েছে
ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরাইল ও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশাল ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠছে, যা বিস্ফোরণের পরিণতি বলে নিশ্চিত করা হয়। ইরানি সংবাদ সংস্থা মেহর জানায়, ইসরাইলের মধ্যাঞ্চলে হঠাৎ করে ক্ষেপণাস্ত্র সতর্কতা সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং দ্রুত জানা যায়, ইয়েমেন থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র বিমানবন্দরের কাছে বিস্ফোরিত হয়।
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (IDF) নিশ্চিত করেছে, ইয়েমেন থেকে নিক্ষিপ্ত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রটি প্রতিহত করতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষেপণাস্ত্রটিকে থামাতে না পারায় বড় ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি তৈরি হয়। IDF মুখপাত্র জানান, তদন্ত চলছে এবং ঘটনাস্থলে নিরাপত্তা বাহিনী ও অনুসন্ধান দল অভিযান পরিচালনা করছে।
হামলার দায় এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ স্বীকার করেনি। তবে পর্যবেক্ষকদের ধারণা, এটি ইরান-সমর্থিত ইয়েমেনের হুথি গোষ্ঠীর অংশ হতে পারে। সম্প্রতি হুথিরা গাজা ইস্যুতে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে এবং লোহিত সাগরে মার্কিন রণতরীসহ বেশ কয়েকটি স্থানে হামলা চালিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, বেন গুরিয়নে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে, যা প্রচলিত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো দ্বারা প্রতিহত করা কঠিন। ইসরাইলের আয়রন ডোম, ডেভিড’স স্লিং এবং অ্যারো সিস্টেম সাধারণত সাবসনিক বা সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধে সক্ষম হলেও, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র রুখে দেওয়া এখনো বিশ্বের অনেক দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ।
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যে আরও বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ইয়েমেন সত্যিই ইসরাইলের অভ্যন্তরে হাইপারসনিক হামলা চালাতে সক্ষম হয়, তবে এটি নতুন এক ‘মাল্টি-ফ্রন্ট যুদ্ধের’ বাস্তবতা তুলে ধরছে। যেখানে হুথি গোষ্ঠীর পাশাপাশি লেবানন, ইরান ও অন্যান্য ইরানঘনিষ্ঠ শক্তিগুলো যুক্ত হতে পারে।
এদিকে ইয়েমেন সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছে, তারা লোহিত সাগর দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত তেল পরিবহন নিষিদ্ধ করেছে। এটি তাদের কৌশলগত আক্রমণাত্মক মনোভাবেরই ইঙ্গিত।
বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর ইসরাইলের বাণিজ্যিক, কূটনৈতিক ও প্রতিরক্ষা দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত কৌশলগত একটি স্থাপনা। সেখানে হামলা ইসরাইলের জাতীয় মর্যাদা, নিরাপত্তা ও বিমান চলাচলের ওপর বড় আঘাত। এই হামলা প্রমাণ করে, ইরানঘনিষ্ঠ প্রতিরোধ জোট এখন ইসরাইলের ভেতরে আঘাত হানার সামর্থ্য রাখে।
মন্তব্য করুন