মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধির মধ্যে ইরান প্রতিবেশী আরব দেশগুলোকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদি তারা ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সামরিক হামলায় সহায়তা করে, তাহলে তারাও লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে ইরানের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে নতুন চুক্তির জন্য ‘সর্বোচ্চ চাপ’ কৌশল অব্যাহত রেখেছেন। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, ইরান যদি চুক্তিতে রাজি না হয়, তবে দেশটির বিরুদ্ধে সামরিক হামলা চালানো হতে পারে। তবে ইরান ট্রাম্পের এই হুমকিকে আমলে নেয়নি। বরং দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেছেন, কোনোভাবেই ইরান মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে না।
ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিলেও তেহরান তা প্রত্যাখ্যান করেছে। ইরানের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, ওমানের মতো মাধ্যমের মাধ্যমে পরোক্ষ কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যেতে আগ্রহী ইরান। এতে রাজনৈতিক সমাধানের পথ খুলে দেওয়া সম্ভব বলে মনে করা হচ্ছে।
ইরাক, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, তুরস্ক ও বাহরাইনের মতো দেশগুলোকে ইরান আনুষ্ঠানিকভাবে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, যদি তারা মার্কিন হামলায় সহায়তা করে—যেমন তাদের ভূখণ্ড বা আকাশসীমা ব্যবহার করতে দেয়—তাহলে তা শত্রুতার শামিল বলে বিবেচিত হবে। ইরানের কর্মকর্তা জানান, এমন কর্মকাণ্ডের ‘‘ভয়াবহ পরিণতি হতে পারে।
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। খামেনি ইরানের সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেকোনো আগ্রাসনের কঠোর জবাব দিতে হবে।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল, কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন এই চুক্তি থেকে সরে আসে। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্ক ক্রমশই অবনতি হচ্ছে। সম্প্রতি ট্রাম্প ইরানের ওপর নতুন চুক্তির জন্য চাপ বাড়িয়েছেন, এমনকি সামরিক হামলার হুমকিও দিয়েছেন।
ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া সামরিক ঘাঁটিতে বোমারু বিমান মোতায়েন করেছে, যা ইরানের দিকে ইঙ্গিত করছে। তবে ইরান এতেও ভীত নয় বলে জানিয়েছে।
গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও ইয়েমেনে চলমান সংঘাতের মধ্যে ট্রাম্পের ইরান হামলার হুমকি পুরো মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করেছে। উপসাগরীয় দেশগুলো ইতিমধ্যেই আঞ্চলিক সংঘাতের আশঙ্কায় বাড়ছে।
ইরান পরিষ্কার করে দিয়েছে, তারা সরাসরি আলোচনায় যাবে না, তবে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে সমাধানের পথ খোলা রাখছে। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি বলেছেন, ‘‘ওয়াশিংটনের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো না পর্যন্ত সরাসরি আলোচনা সম্ভব নয়।’
মন্তব্য করুন