‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ একটি অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব, যা দুটি দেশের মধ্যে আমদানির ওপর শুল্ক ও নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে ঘটে। এতে একটি দেশের অন্যায্য বাণিজ্যিক কার্যকলাপের প্রতিশোধ নিতে বা অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত করতে এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। ইনভেস্টোপিডিয়ার সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি একটি অর্থনৈতিক সংঘর্ষ, যেখানে এক দেশ অন্য দেশের পণ্য ও পরিষেবার ওপর শুল্ক আরোপ করে।
বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদের মতে, শুল্ক সাধারণত অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। কারণ এটি দেশগুলোর জন্য বিশেষায়িত উৎপাদন ও বাণিজ্যের সুবিধা গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে, যেমন উৎপাদন বা প্রতিরক্ষা খাত, দেশের নিজস্ব শিল্প সুরক্ষিত রাখতে শুল্ক আরোপ করা হতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধ অবশ্য নতুন কিছু নয়। যখন থেকে মানুষ একে অপরের সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করেছে, তখন থেকেই এমন দ্বন্দ্ব চলছে। ১৭ শতকে ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো বিদেশি উপনিবেশগুলোর সঙ্গে একচেটিয়া বাণিজ্যের অধিকার নিয়ে একে অপরের সঙ্গে লড়াই করেছে।
বিভিন্ন দেশের শুল্ক আরোপ ও বাণিজ্য যুদ্ধের ইতিহাস
১. যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বাণিজ্য যুদ্ধ:
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চীনা বৈদ্যুতিক বাহন (ইভি) এবং লিথিয়ান-আয়ন ব্যাটারির ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করেছিলেন। ২০২৪ সালে চীনের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক এবং লিথিয়ান-আয়ন ব্যাটারির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়।
২. মার্কিন শুল্ক নীতি:
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে ১০ শতাংশ বেসলাইন শুল্ক আরোপ করার ঘোষণা দেন। এতে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশকে পালটা শুল্কের মুখে পড়তে হয়। ৯ এপ্রিল থেকে শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়।
৩. ব্রিটিশ-চীনার বাণিজ্য যুদ্ধ:
১৯ শতকে ব্রিটিশরা ভারতে উৎপাদিত আফিম চীনে পাঠাতো, যা চীনের সম্রাট অবৈধ ঘোষণা করেন। আফিম জব্দ করতে চীন সেনা পাঠালে, ব্রিটিশরা শক্তির মাধ্যমে চীনকে পরাজিত করে এবং বাধ্য করে বিদেশি বাণিজ্য খুলে দিতে।
৪. যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাণিজ্য যুদ্ধ:
১৯৩০ সালে যুক্তরাষ্ট্র স্মুট-হলওয়ে শুল্ক অ্যাক্ট পাস করে, যা ইউরোপীয় কৃষিপণ্য থেকে আমেরিকান কৃষকদের রক্ষা করার উদ্দেশ্যে ছিল। এর ফলস্বরূপ কয়েকটি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পালটা শুল্ক আরোপ করে, যার প্রভাবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য হ্রাস পায়।
৫. যুক্তরাষ্ট্র-চীনের বর্তমান বাণিজ্য যুদ্ধ:
২০১৮ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনসহ অন্যান্য দেশগুলোর পণ্যের ওপর একের পর এক শুল্ক আরোপ শুরু করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে চীনও পালটা শুল্ক আরোপ করে। এই বাণিজ্য যুদ্ধটি ২০২৫ সালের শুরুর দিকে আরও উত্তপ্ত হতে পারে।
বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাব
বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে দেশগুলো নিজেদের অর্থনীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং এর সরাসরি প্রভাব সাধারণ ভোক্তাদের ওপর পড়ে। যেমন চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের কারণে আমেরিকান আমদানিকারকরা উচ্চ দাম পরিশোধ করতে বাধ্য হন, যার ফলে আমেরিকান ভোক্তাদের উপরও এই চাপ পড়তে থাকে।
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিক অশান্তি সবসময়ই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে এবং দেশগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।
মন্তব্য করুন