দিনে দুবার নিয়মিত দাঁত মাজা এবং মাউথওয়াশ ব্যবহার করেও অনেক সময় মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে। এই সমস্যা কোনো ভুল মাজন বা মাজার ধরনে নয়, বরং অন্য কোনো কারণে হতে পারে। আপনি যদি দেখতে পান যে, দাঁতে পোকা পড়ছে, মাড়ি থেকে রক্ত পড়ছে এবং মুখে দুর্গন্ধ হচ্ছে, তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে— হয়তো আপনি ভালোভাবে দাঁত মাজছেন না। কিন্তু প্রকৃত বিষয়টি একটু ভিন্ন।
রক্তে শর্করার (গ্লুকোজ) মাত্রা বাড়লে এটি মুখগহ্বরে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করতে পারে, যার মধ্যে অন্যতম পেরিয়োডন্টাইটিস। পেরিয়োডন্টাইটিস হলে মাড়ি বা দাঁতের নরম টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি ছোট ক্ষত বা ঘা থেকে বড় আকার ধারণ করতে পারে। এর ফলে দাঁতে তীব্র যন্ত্রণা হয়, মাড়ি থেকে রক্ত পড়তে শুরু করে, এবং মুখে দুর্গন্ধও তৈরি হয়। এমনকি খাবার চিবাতে সমস্যা হতে পারে।
যখন রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে যায়, তখন লালার মধ্যেও কিছু রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। এটি মুখগহ্বরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দেয় এবং মুখে খারাপ ব্যাকটেরিয়াদের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়, যা দাঁত ক্ষয়ে যাওয়ার এবং মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিস বা অন্য কোনো কারণে দাঁত বা মাড়ির সমস্যার চিকিৎসার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখুন: পেরিয়োডন্টাল সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রথমে বাড়তি শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা, পরিমিত খাদ্যগ্রহণ এবং ওষুধের মাধ্যমে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
মুখগহ্বরের যত্ন: মুখগহ্বরের সুস্থতা বজায় রাখতে দিনে অন্তত দুবার দাঁত মাজুন। ফ্লুয়োরাইডযুক্ত মাজন ব্যবহার করলে দাঁত ও মাড়ির জন্য ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ: দাঁত ও মাড়ির কোনো ধরনের সমস্যা শুরু হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বছরে অন্তত দুটি পরীক্ষা করিয়ে সমস্যা শনাক্ত করুন।
কৃত্রিম দাঁত বা ব্রেসের যত্ন: কৃত্রিম দাঁত বা ব্রেস ব্যবহারের ক্ষেত্রে নিয়মিত পরিষ্কার রাখা উচিত। এগুলোও মাড়ি বা মুখগহ্বরে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।
ধূমপান ও ডায়াবেটিসের প্রভাব: ধূমপান ডায়াবেটিসের সঙ্গে যোগ হয়ে দাঁত ও মাড়ির সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই ধূমপান নিয়ন্ত্রণে রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
ডায়াবেটিসের কারণে মুখগহ্বরের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে এবং দাঁত ও মাড়ির রোগ সৃষ্টি হতে পারে। নিয়মিত দাঁত মাজা, শর্করা নিয়ন্ত্রণ, চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং ধূমপান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এই সমস্যাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
মন্তব্য করুন