রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) প্রশাসনের উদ্যোগে পবিত্র রমজান মাসে শিক্ষার্থীদের জন্য গণ ইফতার আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথমে মাসব্যাপী ইফতারের পরিকল্পনা থাকলেও, মাত্র তিন দিনেই শেষ হয়ে যায় এই কর্মসূচি। তবে এই উদ্যোগ প্রশংসিত হলেও, ইফতার আয়োজনের জন্য অর্থের উৎস নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন:
শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলেছেন, ইউজিসি (বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন) কেন শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ইফতার আয়োজনের জন্য বাজেট বরাদ্দ করেছে? বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউজিসি এ বরাদ্দ দিয়েছে, কিন্তু ইউজিসি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইফতারের জন্য কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় না।
ইফতার আয়োজনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউজিসি থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে ইউজিসি জানাচ্ছে যে, তারা ইফতার বাবদ কোনো অর্থ বরাদ্দ দেয়নি, এবং এমন আয়োজনের জন্য সরকারি আর্থিক সহায়তা দেয়ার কোনও সুযোগ নেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া:
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফাহির আমিন বলেন, “প্রথম দিন কিছুটা অব্যবস্থাপনা ছিল, তবে এই উদ্যোগটি ভালো ছিল। তবে প্রশ্ন উঠছে, অর্থ কোথা থেকে এসেছে। যদি ইউজিসি থেকে টাকা আসে, তবে কেন শুধুমাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়কে এই বরাদ্দ দেওয়া হলো?” তিনি আরও বলেন, “যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ড থেকে খরচ হয়, তাহলে তারা হলের খাবারের মান উন্নত করতে পারত।”
ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী মো. আতাউল্লাহ বলেন, “গণ ইফতারের আয়োজন খুব ভালো, তবে এটি শুধুমাত্র তিন দিনই কেন সীমাবদ্ধ ছিল, তা জানতে চাওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে, কেন শুধু রাবির জন্য ফান্ড বরাদ্দ দেওয়া হলো, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন এটি দেওয়া হয়নি?”
প্রশাসনের ব্যাখ্যা:
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক আখতার হোসেন মজুমদার জানিয়েছেন, তারা প্রথমে স্পন্সর খুঁজছিলেন, কিন্তু পরে ইউজিসি থেকে বরাদ্দ পেয়েছেন। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থ ইউজিসি থেকে আসে, তবে এই বরাদ্দ ইউজিসির একটি সংশোধিত বাজেট থেকে দেওয়া হয়েছে।”
ইউজিসির সদস্যের বক্তব্য:
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মো. তানজিমউদ্দিন খান জানান, “ইফতার বাবদ ইউজিসি থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দ দেওয়ার সুযোগ নেই। আমরা তখনই বরাদ্দ দিতে পারি যখন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ কোনো সহায়তা দরকার, যেমন জুলাই আন্দোলনে আহত বা নিহত শিক্ষার্থীদের জন্য।”
এই বিতর্কে মূলত অর্থের উৎস এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনাকে কেন্দ্র করে প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ইফতার আয়োজনটি একটি ইতিবাচক উদ্যোগ ছিল, তবে এর পরিবেশনা এবং অর্থনৈতিক দিক নিয়ে নানা সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন