গত বছর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালানোর পর বাংলাদেশের অবস্থা ছিল গাজার মতো বিধ্বস্ত। ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানকে এক সাক্ষাৎকারে এ কথা জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, হাসিনা বাংলাদেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেছেন। এটি ছিল সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত একটি দেশ, আরেকটি গাজার মতো। তবে এতে কোনো ভবন ধ্বংস হয়নি, ধ্বংস হয়েছে প্রতিষ্ঠান, নীতি-নৈতিকতা, মানুষ, এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক।
গণমাধ্যমটি জানায়, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন দেশে ফিরলেন, তখন বাংলাদেশের রাস্তাগুলো রক্তে ভেজা ছিল। পুলিশের ছোড়া বুলেটে নিহত এক হাজারেরও বেশি বিক্ষোভকারী ও শিশুর লাশ মর্গে স্তূপ করে রাখা ছিল।
ক্যালেন্ডারের পাতায় ছিল ৫ আগস্ট ২০২৪। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে সেদিন পতন ঘটে আওয়ামী লীগ সরকারের। এরপর দেশ ছেড়ে হেলিকপ্টারে চড়ে ভারতে পালান ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনার শাসনামল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, হাসিনার শাসনামলে কোনো সরকার ছিল না, ছিল একটি দস্যু পরিবারের শাসন। সরকারপ্রধানের যেকোনো আদেশ তখন পালিত হতো। কেউ সমস্যা তৈরি করছে? আমরা তাদের উধাও করে দেব। নির্বাচন করতে চান? আমরা নিশ্চিত করব আপনি সব আসনে জয়ী হবেন। আপনি টাকা চান? এই যে, ব্যাংক থেকে এক মিলিয়ন ডলার ঋণ, যা আপনাকে কখনোই ফেরত দিতে হবে না।
সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস আরও জানান, শিক্ষার্থীদের অনুরোধে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের নেতৃত্ব দিতে রাজি হয়েছেন।
ভারতে আশ্রয় নিয়ে হাসিনার বিষয়ে ড. ইউনূস বলেন, ভারত হাসিনাকে আতিথ্য দিলে তা সহ্য করা হবে, তবে দেশকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে ভারতকে একটি প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া বিপজ্জনক। এটি দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলে।
দ্য গার্ডিয়ান বলছে, বাংলাদেশে হাসিনার শাসনামল ছিল স্বৈরাচার, সহিংসতা এবং দুর্নীতির অভিযোগে ভরপুর। জুলাই ও আগস্ট মাসে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর সমাপ্তি ঘটে। জাতিসংঘের মতে, ওই সময় বাংলাদেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনে এক হাজার ৪০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়। ওই আন্দোলনে পুলিশের সহিংস দমনপীড়ন মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন শেখ হাসিনা।
ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, এবার (আসন্ন) ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। তিনি জানান, এ বছর ডিসেম্বর থেকে আগামী বছর মার্চের মধ্যে যেকোনো সময় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।
তবে দ্য গার্ডিয়ানকে নবগঠিত দল জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশের বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব নয়।
গণমাধ্যমটি জানায়, ইতিমধ্যে ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। ইউনূসের বৈধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তার ওপর ক্রমবর্ধমান চাপ প্রয়োগ করছে দলটি।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দ্য গার্ডিয়ান-কে বলেন, “এই সরকার সহসাই নির্বাচন দিতে চাচ্ছে না। সংস্কারের জন্য এদের কোনো ম্যান্ডেট নেই। এটি কেবলই অন্তর্বর্তীকালীন একটি সরকার।”
মন্তব্য করুন