
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্য, যেখানে তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের জর্ডান ও মিশরে স্থানান্তরের প্রস্তাব দিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই প্রস্তাবকে কেউ দেখছে ফিলিস্তিনি সংকট সমাধানের একটি উপায় হিসেবে, আবার অনেকেই এটিকে ফিলিস্তিনিদের অধিকার খর্ব করার ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন।
ট্রাম্পের প্রস্তাবের পেছনের কারণ
- গাজার পরিস্থিতি:
- গাজা প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
- জাতিসংঘের তথ্যমতে, গাজার ৬০% অবকাঠামো ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত।
- ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলায় গাজার অধিকাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত।
- মার্কিন অবস্থান:
- ট্রাম্পের মতে, ফিলিস্তিনিদের জন্য নতুন বাসস্থানের ব্যবস্থা করা গেলে গাজার সংকট কিছুটা লাঘব হতে পারে।
- আরব দেশগুলোর ভূমিকার ওপর জোর দিয়ে তিনি জর্ডান ও মিশরকে এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
- ইসরাইলকে সমর্থন:
- ট্রাম্প প্রশাসনের সময় থেকে ইসরাইলের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন বেড়েছে।
- ইসরাইলের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে গাজাবাসীদের সরানোর এই প্রস্তাব উঠে আসছে।
প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া
- ফিলিস্তিনিদের মত:
- গাজার বাসিন্দারা তাদের ভূমি ছাড়তে নারাজ।
- তারা এই প্রস্তাবকে তাদের ভূমি ও ঐতিহ্যের প্রতি অবমাননা হিসেবে দেখছে।
- হামাসের অবস্থান:
- হামাস এই পরিকল্পনার তীব্র বিরোধিতা করেছে।
- তাদের মতে, ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার যে কোনো চেষ্টাই ব্যর্থ হবে।
- জর্ডান ও মিশরের প্রতিক্রিয়া:
- জর্ডানে ইতিমধ্যে ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছে।
- মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক মিশরে স্থানান্তরের বিরোধী।
- উভয় দেশ ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে।
আন্তর্জাতিক বিতর্ক
- ফিলিস্তিনিদের অধিকার:
- এই প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের নিজ ভূমিতে বসবাসের অধিকার খর্ব করতে পারে।
- আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, দখলকৃত ভূমি থেকে জনগণকে জোরপূর্বক সরানো যুদ্ধাপরাধের শামিল।
- মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতা:
- ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে নিলে জর্ডান ও মিশরে জনসংখ্যা বাড়বে, যা ওই অঞ্চলে সামাজিক ও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করবে।
- এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে নতুন সংঘাত সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
- ইসরাইলের ভূমিকা:
- ইসরাইলের ডানপন্থী নেতারা এই পরিকল্পনাকে সমর্থন করছেন।
- গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দিলে ইসরাইল সেখানে বসতি স্থাপনের সুযোগ পেতে পারে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবের ভবিষ্যৎ ও প্রভাব
- এই প্রস্তাব যদি বাস্তবায়িত হয়, তবে এটি মধ্যপ্রাচ্যে একটি বড় মানবিক ও রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি করবে।
- আন্তর্জাতিক মহল ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান হিসেবে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের ওপর জোর দিচ্ছে।
- ট্রাম্পের প্রস্তাব ইসরাইলের প্রতি তার পক্ষপাতদুষ্ট অবস্থানেরই প্রতিফলন।
গাজার ফিলিস্তিনিদের মিশর ও জর্ডানে স্থানান্তরের প্রস্তাব শুধু বিতর্কিত নয়, বরং এটি ফিলিস্তিনিদের অধিকার এবং তাদের ঐতিহাসিক সংগ্রামের প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করে। এই প্রস্তাব বাস্তবায়নের চেষ্টা ফিলিস্তিনি সংকটকে আরও গভীর করবে এবং মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করতে পারে।