RCTV Logo ‎কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
৭ অক্টোবর ২০২৫, ৫:৫৩ অপরাহ্ন

কুড়িগ্রামে ফসলহানিতে নিঃস্ব কৃষক, নদীভাঙনে ঘরছাড়া পরিবার

ছবিঃ আরসিটিভি

কুড়িগ্রামের প্রধান নদনদীগুলোর পানি কমে বর্তমানে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ কমেনি নদী তীরবর্তী মানুষের। পানি নেমে যাওয়ার পরও নিম্নাঞ্চলের বহু রোপা আমন, শাকসবজি ও মাষকলাই ক্ষেত এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অপরদিকে জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। গত দুইদিনে এসব এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।

‎মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার প্রায় ১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, চিলমারী ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

‎নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সিট মালিয়ানি, চর নুচনি, রায়গঞ্জের দামালগ্রাম ও ধাউরারকুটি এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমি থেকে পানি নেমে গেলেও ক্ষেতের ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে।

‎কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, উজান থেকে ভারি ঢলে জমি তলিয়ে গেছে। ধান কাটা প্রায় সময় হয়ে এসেছিল, কিন্তু এখন সব শেষ। আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেল।

‎ধাউরারকুটির কৃষক আমজার হোসেন জানান, ধার করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচে ধান লাগিয়েছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এই ঋণ কিভাবে শোধ করবো বুঝতে পারছি না।

‎একইসঙ্গে জেলার নদ-নদীগুলোর তীরজুড়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙন। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর মোট ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী, রৌমারী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলাগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।

‎রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রামের নুর ইসলাম বলেন, দুধকুমার নদীর ভাঙনে আমার বসতভিটা নদীতে চলে গেছে। কোনোমতে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছি। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।

‎একই এলাকার এরশাদুল হক বলেন, চোখের সামনে বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না। এখন কোথায় যাবো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।

‎কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে নদ-নদীর চারটি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। অতিরিক্ত পয়েন্টে কাজের অনুমোদন পেলে দ্রুত তা শুরু করা হবে।

‎কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।

‎এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও নদীভাঙন এলাকায় বসবাসরত মানুষদের দাবি, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, সাময়িক জিও ব্যাগ ফেলায় কিছু সময় ভাঙন ঠেকলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়।

Facebook Comments Box

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

লালমনিরহাট সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়নের ৫৬ ইউপি সদস্যের আ.লীগ–জাপা থেকে গণপদত্যাগ ঘোষণা, এর মধ্যে ৪৪ জনই আ.লীগের

টানা ৫ হারে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় বাংলাদেশ

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু

আজ ২১ অক্টোবর, দিনটি কেমন যাবে আপনার?

গাজা যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণে সেনা কর্মকর্তা পাঠাবে জার্মানি

‎যান্ত্রিক ত্রুটি; বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সব ইউনিট বন্ধ

বিমানবন্দরের আগুনে ১২ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি

এমবাপ্পের গোলে বার্সাকে পেছনে ফেলল রিয়াল

গাজায় বিমান হামলায় এক দিনে নিহত ৪৫, ফের যুদ্ধবিরতির ঘোষণা ইসরায়েলের

আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে মরক্কোর ইতিহাস

১০

তিন অগ্নিকাণ্ডের পর প্রশ্ন— দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা?

১১

আজ থেকে আমরন অনশনে যাচ্ছেন শিক্ষকরা

১২

শ্যামাপূজা ও দীপাবলি আজ

১৩

আজ ২০ অক্টোবর, দিনটি কেমন যাবে আপনার?

১৪

চিকেন পুরি তৈরির রেসিপি জেনে নিন

১৫

মহানবী (সা.) যে জায়গায় ঈদ ও বৃষ্টির নামাজ পড়েছিলেন

১৬

দুধ দিয়ে গোসল কেন এটা কি কোনো রীতি?

১৭

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে আগুন ‘পরিকল্পিত’

১৮

‎যে কমিশন মার্কা দিতে ভয় পায়, তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়- সার্জিস আলম।

১৯

দুধ দিয়ে গোসল করলে শরীরের কি কোনো উপকার হয়?

২০