কুড়িগ্রামের প্রধান নদনদীগুলোর পানি কমে বর্তমানে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ কমেনি নদী তীরবর্তী মানুষের। পানি নেমে যাওয়ার পরও নিম্নাঞ্চলের বহু রোপা আমন, শাকসবজি ও মাষকলাই ক্ষেত এখনো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। অপরদিকে জেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ নদীভাঙন। গত দুইদিনে এসব এলাকার প্রায় শতাধিক পরিবার তাদের বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) কুড়িগ্রাম জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, সাম্প্রতিক বন্যায় জেলার প্রায় ১ হাজার ৭৮৭ হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী, রাজারহাট, চিলমারী ও সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
নাগেশ্বরী উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সিট মালিয়ানি, চর নুচনি, রায়গঞ্জের দামালগ্রাম ও ধাউরারকুটি এলাকাসহ জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, অনেক জমি থেকে পানি নেমে গেলেও ক্ষেতের ফসল পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
কৃষক আব্দুল হামিদ বলেন, উজান থেকে ভারি ঢলে জমি তলিয়ে গেছে। ধান কাটা প্রায় সময় হয়ে এসেছিল, কিন্তু এখন সব শেষ। আমার বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
ধাউরারকুটির কৃষক আমজার হোসেন জানান, ধার করে ৩৫-৪০ হাজার টাকা খরচে ধান লাগিয়েছিলাম। সব নষ্ট হয়ে গেছে। এখন এই ঋণ কিভাবে শোধ করবো বুঝতে পারছি না।
একইসঙ্গে জেলার নদ-নদীগুলোর তীরজুড়ে চলছে ভয়াবহ ভাঙন। স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও দুধকুমার নদীর মোট ১৫টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে নাগেশ্বরী, রৌমারী, চিলমারী ও উলিপুর উপজেলাগুলো বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের দামালগ্রামের নুর ইসলাম বলেন, দুধকুমার নদীর ভাঙনে আমার বসতভিটা নদীতে চলে গেছে। কোনোমতে ঘরের জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে পেরেছি। এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই।
একই এলাকার এরশাদুল হক বলেন, চোখের সামনে বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেল। কিছুই করতে পারলাম না। এখন কোথায় যাবো, কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান বলেন, বর্তমানে নদ-নদীর চারটি পয়েন্টে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে। অতিরিক্ত পয়েন্টে কাজের অনুমোদন পেলে দ্রুত তা শুরু করা হবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, পানি পুরোপুরি নেমে গেলে ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকারিভাবে প্রণোদনার আওতায় আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও নদীভাঙন এলাকায় বসবাসরত মানুষদের দাবি, ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। তারা বলেন, সাময়িক জিও ব্যাগ ফেলায় কিছু সময় ভাঙন ঠেকলেও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া দীর্ঘমেয়াদি সমাধান সম্ভব নয়।
প্রকাশক: মোঃ শরিফুল ইসলাম। যোগাযোগ: মেডিকেল পূর্ব গেট, বুড়িরহাট রোড, রংপুর, বাংলাদেশ।
Copyright © 2025 RCTV ONLINE. All rights reserved.