কাজে আসছে না উত্তরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের স্বপ্নের বালাশী-বাহাদুরাবাদ ফেরীঘাট। এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও নাব্যতা সংকটের কারনে উদ্ধোধনের প্রায় ৩ বছরেও আলোর দেখছে না এ ফেরীঘাটটি। প্রতিদিন একাধিক মেশিনের মাধ্যমে ড্রেজিং এ লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যায় হলেও তা কোন কাজে লাগছে না এ পথের যাত্রীদের।
প্রায় দেড় ‘শ কোটি টাকা ব্যায়ে ফেড়িঘাট ও বছরে লক্ষ লক্ষ টাকা ড্রেজিং এ ব্যায় হলেও এ পথের যাত্রীদের চলাচল করতে হচ্ছে সেই নৌকায়।ব্রক্ষপুত্র নদের দুই পাড়ের মানুষের দীর্ঘ দিনের আন্দোলন ও দাবীর প্রেক্ষিতে রাজধানীসহ বিভিন্ন এলাকার সাথে উত্তরাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে, গাইবান্ধার বালাসীঘাট ও নদীর ওপারে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাটের সাথে ফেরি সার্ভিস চালু করতে নির্মাণ করা হয় নৌ, বাসসহ সকল সুবিধাযুক্ত দুটি আধুনিক টার্মিনাল।
২০২২ সালের মার্চ মাসে এ পথে পরিক্ষামুলক লঞ্চ চলাচলের উদ্ধোধন করেন নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালেদ মাহমুদ চৌধুরী। তখন থেকেই নাব্যতা সংকট দেখিয়ে ছোট ৪টি লঞ্চ দিয়ে চলছে শুধু বর্ষা মৌসুমে এ পথের যাত্রা। আর বর্ষা শেষ হলেই বাকি প্রায় ৮ মাস নৌকায় একমাত্র ভরসা।
দীর্ঘ সময়েও চালু হয়নি বড় লঞ্চ, ফেড়ি, রো রো ফেড়িসহ প্রকল্পের অন্যন্য স্থাপনা। ফলে সরকারের এ মেগা প্রকল্প থেকে কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছেন না এ অঞ্চলের মানুষ। দীর্ঘ সময়েও প্রকল্প দৃশ্যমান না হওয়ায় ক্ষোভ বাড়ছে স্থানীয়দের মাঝে। যোগাযোগে পরির্বতনের আশার আলো দেখলে তা যেন দীর্ঘদিনও জ্বলছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা কাশেম মিয়া জানান, দীর্ঘ দিন থেকে বন্ধ হয়ে যাওয়া এই ঘাটটি পুনরায় চালু হলে বঙ্গবন্ধু সেতুর উপরে যানবাহনের চাপ কমবে। সেই সাথে উত্তরের জেলাগুলোর সাথে নদী ওপারের জেলাগুলোর যোগাযোগের সময় লাগবে অর্ধেকেরও কম। বাড়বে ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি।
নাব্যতা সমস্যার সমাধানে ড্রেজার দিয়ে নিয়মিত খনন করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। প্রায় দু-বছর থেকে তোলা হচ্ছে খাতা কলমে নিয়মিত খননের বিল। আবার নদীতে ড্রেজিং করে সেই বালু ফেলা হচ্ছে নদীতেই। অপরিকল্পিত ভাবে খননের কারনে মিলছে না নাব্যতা সমস্যার সমাধান বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
বিআইডব্লি¦উটিএ টেকনিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট মো: নুরুল ইসলাম জানান, ড্রেজিং এর অনিয়মের বিষয়ের অভিযোগ সত্য নয় পর্যাপ্ত পানি থাকার পরও লঞ্চ মালিকরা ইচ্ছে করে লঞ্চ চালাচ্ছেন না ।
বালাশি-বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট প্রকল্প পরিচালক মো: নাজিম উদ্দিন পাঠোয়ারি জানান, অতিরিক্ত পলিবাহি নদী হওয়ায় ফেরিসহ ঘাটের অন্যন্য কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হচ্ছেনা। প্রকল্পের শুরু থেকে দুটি ড্রেজারের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফেরানোসহ প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করার চেষ্টা চলছে।
১৯৩৮ সালে বালাশী-বাহাদুরাবাদ ঘাট চালু হয়। এ দুই ঘাটে ফেরি সার্ভিসের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানীর রেল যোগাযোগ চালু ছিল। যমুনা বহুমুখী সেতু চালু হওয়ার পর ২০০০ সাল থেকে এ পথে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ কমাতে আবারো ২০১৭ সালের অক্টোবরে একনেকের সভায় বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌ পথটি আবারও চালু করতে ফেরিঘাট নির্মাণ প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১শ ২৪ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। পরে প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ১৪৫ কোটি ২৭ লাখ টাকা করা হয়।
মন্তব্য করুন