কুড়িগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মোল্লার হাট, রসুলপুর, কড্ডার মোড় এলাকার শতাধিক ঘরবাড়ি, আবাদি জমি ও গাছপালা। পাশাপাশি নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নের চর দামালগ্রাম, চর নুচনি, ফান্দের চরসহ বিভিন্ন চরাঞ্চলও ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হচ্ছে। একই সঙ্গে কুড়িগ্রাম সদর, চিলমারী, রাজারহাট, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার বেশ কিছু নদীপাড়ের গ্রামও ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনে ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে বিস্তীর্ণ কৃষিজমি ও বসতভিটা। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে রাস্তাঘাট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ, মাদরাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ সরকারি-বেসরকারি বহু স্থাপনা। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ভাঙন রোধে জরুরি ব্যবস্থা না নিলে আগামী দিনগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
রায়গঞ্জ ইউনিয়নের বাসিন্দা আবুল মিয়া বলেন, “নদীভাঙন আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিদিন ঘুম ভাঙে নতুন ক্ষতির খবরে। সরকার যদি স্থায়ী ব্যবস্থা নেয়, তাহলে অন্তত আমরা নিরাপদে বসবাস করতে পারবো।”
স্থানীয় আজিবর আলী বলেন, “ভাঙনে জমি হারিয়ে চাষাবাদের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।”
ফান্দের চরের জমেজ উদ্দিন বলেন, “এক রাতের ভাঙনে সব শেষ হয়ে যায়। জমি, গাছ, ঘর সব চলে যায় নদীতে। থাকার জায়গাটুকু নিয়েও শঙ্কায় আছি।”
নদীপাড়ের মানুষজনের দাবি, যদি নদীর তীর সংরক্ষণের ব্যবস্থা দ্রুত নেওয়া হয়, তাহলে শুধু মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদই নয়, সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনাও রক্ষা পাবে।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিবুল হাসান বলেন, “আমাদের বাজেট সীমিত হলেও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বিভিন্ন ভাঙনপ্রবণ এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলার কাজ চলছে।”
প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে কুড়িগ্রামের নদীভাঙনে শত শত পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ ছাড়া এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি সম্ভব নয়।
মন্তব্য করুন