
উত্তরের নদীবেষ্টিত দুই জেলা গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম। নদীর এপারে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলা, ওপারে কুড়িগ্রামের চিলমারী। দুই জেলার মাঝপথ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে দেড় কিলোমিটার প্রসস্ত তিস্তা নদী। এই নদীর ওপর নির্মিত ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ হরিপুর-চিলমারী তিস্তা পিসি গার্ডার সেতুর উদ্বোধন পিছিয়েছে। আগামী ২ আগষ্ট সেতুটি উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক করে চিঠি দিয়েছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। গত ১৩ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ শামীম বেপারী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন।
সেই দিনক্ষণ আবার পরিবর্তন করে আগামী ২৫ আগষ্ট সেতুটি উদ্বোধনের সময় নির্ধারন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকৌশলী তপন কুমার চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ঠিক কী কারণে দিনক্ষন পরিবর্তন করা হয়েছে তা জানা যায়নি। এর আগে গত ৪ জুলাই স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদী সেতু পরিদর্শনে এসে বলেছিলেন জুলাই মাসের শেষের দিকে সেতুটির উদ্বোধন করা হবে। সচিব সেই কথা রক্ষা করতে পারেনি। এভাবে বার বার সেতু উদ্বোধনের দিনক্ষণ পরিবর্তন হওয়ায় জনমনে নানাবিধ ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলার হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মো. মোজাহারুল ইসলাম বলেন, এভাবে বার বার সেতু উদ্বোধনের তারিখ পেছানোটা ভাল লক্ষন মনে হচ্ছে না। দেশের এই পেক্ষপট আগামী ২৫ আগষ্ট সেতুটি উদ্বোধন হবে কি না, তার কোন গেরান্টি নেই। বিষয়টি নিয়ে দুই জেলাবাসির মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। চরবাসি অনেকে বলছেন, একজন সচিব তাঁর কথা তিনি রক্ষা করতে পারলেন না। তাহলে মানুষ কোথায় গিয়ে আস্থ পাবে।
উপজেলার পাঁচপীর বাজারস্থ বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এস এ এস এর নিবার্হী পরিচালক এ বি এম নূরুল আকতার মঞ্জু বলেন, দীর্ঘ ১১ বছর ধরে সেতুটি নির্মাণ কাজ চলছে। এর আগে চার বার সেতুটি উদ্বোধনের কথা ছিল। কিন্তু কি কারনে পিছে যাচ্ছে, জানা যায়নি। এটি নিয়ে এলাকাবাসির মাঝে ব্যাপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছ। দুই জেলাবাসির দাবির প্রেক্ষিতে সেতুটির উদ্বোধন অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পাঁচপীর বাজার- কুড়িগ্রামের চিলমারি উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারি সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করছেন চায়না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। সেতুটি নির্মাণে অর্থ প্রদান করছেন সৌদি ডেভেলোপম্যান্ট ফান্ড। এতে ব্যয় হবে ৭৩০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি গাইবান্ধার সার্কিট হাউসে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হরিপুর-চিলমারী তিস্তা সেতুর ভিত্তি উদ্বোধন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। ২০১৮ সালের পর ২০২১ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে সংযোগ সড়কসহ সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলনের নেতা প্রবীণ অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আ.ব.ম শরিওতুল্লাহ মাস্টারের দাবি ২০২৪ সালে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। তিনি বলেন, ২০০০ সাল থেকে তিস্তা সেতু বাস্তবায়ন আন্দোলন শুরু করা হয়। ২০১২ সালে এসে তিস্তা সেতু নির্মাণ আলোর মুখ দেখতে শুরু করে। এরপর সাবেক তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম প্রামানিকের সার্বিক সহযোগিতায় ২০১৪ সালে সেতু নির্মাণ কাজের সূচনা হয়।
দ্বিতীয়বারের মতো ২০২০ সালের ৬ জুলাই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার হরিপুর-চিলমারী উপজেলা সদরের সঙ্গে সংযোগকারী সড়কে তিস্তা নদীর উপর ১ হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় সংশোধীত) প্রকল্প অনুমোদন দেয়।