যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিনে গুরুত্বপূর্ণ সব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। গতকাল বুধবার ওয়াশিংটনে তিন দিনব্যাপী দ্বিতীয় পর্যায়ের বাণিজ্য আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ৯টায় আবার আলোচনা শুরু হবে।
প্রথম দিনের আলোচনায় বেশির ভাগ বিষয়ে উভয় পক্ষ যুক্তিতর্কে একমত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাসের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তোজা। তবে শুল্ক নিয়ে এখনই কিছু বলার সময় হয়নি বলেও জানান তিনি।
ওয়াশিংটন ডিসিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন এই আলোচনায় বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। আলোচনায় ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অংশ নেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ও প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি ও টেলিযোগাযোগ-বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারও বৈঠকে অংশ নেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাল্টা শুল্ক নিয়ে আলোচনা চলমান থাকা অবস্থায় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। গত সোমবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে লেখা এক চিঠিতে বিষয়টি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি নিরসনের বিষয়ে সমাধান না এলে আগামী ১ আগস্ট থেকে দেশটিতে পণ্য রপ্তানিতে বর্ধিত হারে শুল্ক দিতে হবে।
বৈশ্বিক বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া, জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন করে শুল্কহার নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউসের ৯০ দিনের শুল্কবিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার আগমুহূর্তে, অর্থাৎ স্থানীয় সময় গত সোমবার এ ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
অবশ্য এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিষয়টিও মোটামুটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
এদিকে গত এপ্রিলে পাল্টা শুল্কারোপের ঘোষণার পর তিন মাসেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ বিষয়ে সরকারের দর-কষাকষিতে অগ্রগতি না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রপ্তানিকারকেরা। তাঁরা বলছেন, ৩৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হলে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। অনেক কারখানা পড়বে অস্তিত্বের সংকটে।
এমন প্রেক্ষাপটে আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যে দর-কষাকষি শেষ করতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।
এদিকে ফেসবুক স্ট্যাটাসে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, সহকর্মী বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। প্রথম দিনের আলোচনার পরিধি ছিল ব্যাপক। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি, মেধাস্বত্বসহ সকল খাতের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রতিনিধিদল তাঁদের সমস্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছে ও বক্তব্য শুনেছে। আগামীকাল মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টার বৈঠক হবে। এখন আমাদের আলোচনার পরিসমাপ্তি পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।
সচিবালয়ে গত মঙ্গলবার অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি ও সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির দুটি পৃথক বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমাতে গম, সয়াবিন, বিমানসহ বিভিন্ন মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক ছাড় দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। দেশটি থেকে বাংলাদেশ আরও বোয়িং বিমান কিনবে। তুলা আমদানি বৃদ্ধি করবে। বাংলাদেশ সরকার খাদ্যশস্য ক্রয়েও যুক্তরাষ্ট্রকে গুরুত্ব দেবে। এসব বিষয়ে ছাড় দেওয়া বা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে বাধা নেই।
মন্তব্য করুন