সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ ছয় মাসে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও মামলা চলছে সাড়ে তিন বছর
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ
ছয় মাসে নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও মামলা চলছে সাড়ে তিন বছর
রাজশাহী ব্যুরো
ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনি মামলা নিষ্পত্তির বিধান থাকলেও রাজশাহী জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা চলছে সাড়ে তিন বছর ধরে।
বাদীপক্ষের অভিযোগ, একের পর এক রিভিশন দায়ের করে মামলাটি নিষ্পত্তিতে বাধার সৃষ্টি করছেন বিবাদীপক্ষ। এতে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
বাদীপক্ষ দ্রুত মামলাটি নিষ্পত্তির দাবি জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। বাংলাদেশ ফটোজার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের
রাজশাহী শাখা কার্যালয়ে এ সংবাদ করেন জেলার বাগমারা উপজেলার রাঁয়াপুর গ্রামের বাসিন্দা শাফিনুর নাহার। তিনি মামলার বাদী।
শাফিনুর ২০২২ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত বাগমারার হামিরকুৎসা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিলেন। তাঁর অভিযোগ,
তিনি জিতলেও তাঁকে হারিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।
এই হামিরকুৎসা ইউনিয়নে একসময় ক্যাম্প করেছিলেন জেএমবি ক্যাডার বাংলা ভাই। এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন শাফিনুর নাহার ও তাঁর স্বামী আব্দুল বারী।
এ দম্পতি সে সময় বাংলা ভাইয়ের অপকর্মের তথ্য সাংবাদিকদের জানাতেন।
সেই বাংলা ভাইয়ের ‘কাছের মানুষ’ হিসেবে পরিচিত আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে সাড়ে তিন বছর ধরে মামলা লড়ছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে শাফিনুর নাহার জানান, নির্বাচনে তার প্রতীক ছিল ঘোড়া। তাঁর দাবি, নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন।
কিন্তু বাগমারার তৎকালীন এমপি এনামুল হক ফল ঘোষণা করতে দেননি। নয়টি কেন্দ্রের ফলাফল কেন্দ্রেই ঘোষণা না করে উপজেলায় নেওয়া হয়।
সেখানে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় জেএমবি ক্যাডার আনারস প্রতীকের প্রার্থী আনোয়ারকে।
এই ফল প্রত্যাখান করে হাজারও জনতা সেদিন পুণরায় ভোট গণনার দাবি করলেও তা অগ্রাহ্য করা হয়। শাফিনুর নাহার নিজেও লিখিতভাবে আবেদন করলেও লাভ হয়নি।
ফলে ২০২২ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তিনি রাজশাহী জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। মামলা নম্বর- ৯/২২। মামলাটি ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার বিধান।
কিন্তু সাড়ে তিন বছরেও মামলা শেষ হয়নি। ইউনিয়ন পরিষদের মেয়াদ বাকি আছে আর মাত্র দেড় বছর।
এই সময়ের মধ্যে মামলা শেষ হবে কি না, তা নিয়েই সংশয়ে আছেন প্রার্থী শাফিনুর নাহার।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, বার বার রিভিশন করে মামলা নিষ্পত্তিতে বাধার সৃষ্টি করছেন প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেন ও তাঁর আইনজীবি মিজানুল ইসলাম।
মামলা করার পর ৬ মাস পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে প্রথম রিভিশনটি দায়ের করেছিলেন। নির্বাচনি মামলায় আপিলের সুযোগ থাকলেও তা তিন মাসের মধ্যে শেষ করার বিধান আছে।
কিন্তু রিভিশন করার কোন বিধান আইনগতভাবে নেই। তারপরও রিভিশনের পর প্রতিপক্ষদের কাছে মামলার সমন জারিতেই সময় লাগে প্রায় ছয় মাস।
শাফিনুর জানান, রিভিশনে গিয়েও কোনো শুনানি হচ্ছিল না। এ অবস্থায় ২০২৩ মালের ৫ জুলাই প্রধান বিচারপতি বরবর লিখিত আবেদন করেন শাফিনুর নাহার।
পরে ১৪ আগস্ট আদালত রিভিশন খারিজ করেন। কিন্তু নথি রহস্যজনক কারণে আর ট্রাইবুনালে ফেরত যাচ্ছিল না।
অনেক অনুরোধের পর আদালত ১ নভেম্বর মামলার নথি বিচারিক আদালতে পাঠানো হয়।
বিচারিক আদালতে নথি এলেও এ মামলার কার্যক্রম আর এগোচ্ছে না।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এই মামলার প্রতিপক্ষের আইনজীবি হিসেবে রয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত তিনি ২৬ বার সময়ের প্রার্থনা করেছেন। প্রতিবারই তার আবেদন মঞ্জুর হয়েছে।
২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর আদালতের সাক্ষীর জন্য প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু আইনজীবি মিজানুল ইসলাম সেদিন সাক্ষী করাতে অনীহা প্রকাশ করেন।
শাফিনুর নাহার বলেন, ‘সবশেষ গত ২২ জুন মিজানুল ইসলাম ফের আদালতে সময়ের দরখাস্ত করেন এবং জানান যে, প্রতিপক্ষ আনোয়ার হোসেন আবার দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে রিভিশন মামলা দায়ের করেছেন।
অথচ তার আগের ধার্য্য তারিখেই তিনি আদালতকে বলেছিলেন, নতুন আইন অনুযায়ী তারা সাক্ষীর লিখিত জবানবন্দী পরবর্তী ধার্য তারিখে জমা দেবেন। সেটি না করে তিনি ফের রিভিশনে গিয়ে সময় নষ্ট করছেন।
এভাবে পাঁচটি বছর কাটিয়ে দেওয়াটাই প্রতিপক্ষ ও তাঁর আইনজীবির উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘আগামী ১০ জুলাই নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনালে রিভিশন মামলাটির (মামলা নম্বর ১/২৫) গ্রহণযোগ্য শুনানির জন্য দিন ধার্য আছে।
যে আদেশের ওপর ওই রিভিশন করা হয়েছে, তার শুনানিতে শুধু বিবাদীপক্ষের আইনজীবিই অংশ নিতে পারবেন। সেদিন আদালত যদি রিভিশন মঞ্জুর করেন, তাহলে এ মামলা আর পরিষদের মেয়াদকালে শেষ হবে না।
আর রিভিশন নামঞ্জুর হলে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির সুযোগ আছে। আমরা চাই দ্রুত নিষ্পত্তি হোক।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে শাফিনুর নাহার এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, রাজশাহীর জেলা ও দায়রা জজ, যুগ্ম জেলা জজ, রাজশাহী জেলার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল,
নির্বাচনি আপিল ট্রাইব্যুনাল, আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমি তো মামলার ওতো কিছু বুঝি না।
আমার আইনজীবি আছে, তিনি যা করেন তা-ই হয়। সামনাসামনি কথা বললে ভাল হয়।#
মন্তব্য করুন