বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র জনতার পক্ষ নিয়ে সরব হয়েছিলেন অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছিলেন। পট পরিবর্তনের পর অন্যদের মতো তিনিও ভেবেছিলেন ভালো কিছু হবে। নতুন বাংলাদেশ দেখতে স্বপ্ন বুনেছিলেন। কিন্তু বিভিন্ন পরিস্থিতির কারণে দেশের কাছে আর কোনো প্রত্যাশা নেই অভিনেত্রী।
গতকাল বুধবার (১৮ জুন) সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্ট এমন মন্তব্য করেন। ওই পোস্টে অভিনেত্রী লিখেছেন, ‘একটা গল্প আছে না, শীতের সকালে একজন ইমাম আর একজন চোরের। ইমাম ভাবে, কি ভালো একটা মানুষ এই ঠান্ডায় ফজরের নামাজ পড়তে এসেছে। চোর ভাবে কি ভদ্রলোক দেখতে, দাড়ি দুড়ি রেখে চুরি করে! এই গল্প থেকে আমরা কি শিখেছিলাম? শিখেছিলাম যে যেমন, যার চিন্তাধারা যেমন অন্যদেরও তার কাছে সেইম মনে হয়।’
তিনি যোগ করেন, ‘বিশ্বাস করেন পৃথিবীর সব মানুষ টাকার কাছে তাদের নৈতিকতা বিক্রি করে না। দুনিয়ার সব মানুষের কাছে টাকা সব না। মানুষ নিজেস্বতায় বিশ্বাস করে। স্রোতের বিপরীতেও যায়। রিস্ক নেয়।’
জুলাই আন্দোলন প্রসঙ্গেও কথা বলেছেন অভিনেত্রী। ফরিয়ার ভাষ্য, “জুন মাসে যখন আন্দোলন তুঙ্গে। ইন্টারনেট চলে যাওয়ার পরপর যেসব সেলিব্রিটিদের কাছে মেট্রোরেল ও বিটিভিতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদ করার জন্য ভিডিও বানাতে বলা হয়। আমিও তাদের মধ্যে একজন। আমি প্রথমে সময় চাই, বলি ভেবে জানাব। স্বাভাবিকভাবে সে সময় ডাইরেক্ট না করার মতো সাহস যোগার করতে পারিনি। তারাও বলে সময় নেন আপাতত এমনেই ইন্টারনেট নাই। যেহেতু হোয়াটসঅ্যাপ বন্ধ। তাই সিয়াম কে ডাইরেক্ট মেসেজ দেই ‘তুমি কি কল পেয়েছ?’ সে আমাকে জানায় ‘হ্যাঁ, তবে আমি না করেছি।’ তখন সাহস পাই এবং আমিও তখন না বলি।”
অভিনেত্রী আরও লিখেছেন, “এইসব কথা অযথা বলে বেড়ানোর কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। সেসময় এইটাই করার কথা, না বলেছি বলে আমি বিশেষ কোনো ক্রেডিট নিতে চাইনি। যেহেতু আমি ব্যাক্তিগতভাবে রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ কোনো ভাবেই জড়িত না। অদূর ভবিষ্যতেও কোনো ইচ্ছা কিংবা পরিকল্পনা নেই। তাও যখন দেখি কেউ লেখে ‘এরা তো ডলার খাইছে’। হাসা ছাড়া কিছু করার থাকে না।”
আমি এমন অনেক মানুষকে চিনি যারা মন থেকে আওয়ামি লীগ ভালোবাসে কিন্তু জুলাইতে লাল ডিপি দিয়েছিল। হয়তো জুলাইকে আমাদের সাধারণ মানুষের কাছে যেভাবে পোট্রে করা হইছে এখন বিষয়টা তেমন নাই। কিন্তু আপনি যদি মানুষ হয়ে থাকেন। অমানুষ না হোন তাহলে আপনি কোনো মানুষকে হত্যা করার প্রতিবাদ না করে থাকতে পারতেন না। আপনার রাজনৈতিক পরিচয় কিংবা মতাদর্শ যাই হোক।
এরপরই ফারিয়ে লিখেছেন, ‘এই পোস্টের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের পলিটিক্স নিয়ে স্টেটাস দেওয়া বন্ধ করলাম। কারণ ফাইনালি বুঝে গিয়েছি, জাতি হিসাবে আমরা অত্যন্ত বেহায়া এবং নির্লজ্জ। আমরা কখনও ভালো হবো না। যত আন্দোলন হোক। যত সরকার পরিবর্তন হোক। যতই শান্তিতে নোবেল পাওয়া মানুষ আসুক, আমাদের কেউ দুর্নীতি এবং চুরি করা থেকে আটকাতে পারবে না। শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ যেই ক্ষমতা পাবে সে-ই ক্ষমতার অসৎ ব্যবহার করবে। আমি নিজ দেশের কাছে আর কোন প্রত্যাশা রাখি না।’
সবশেষ অভিনেত্রী লিখেছেন,’পরিশেষে বলতে চাই, সত্যি সত্যি ডলার পেলে আসলে ভালো লাগতো। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে ২৫৩০০ টাকা দিয়ে ২০০ ডলার পাসপোর্টে এন্ডোরর্স করতে খুবই কষ্ট হইছে।’
মন্তব্য করুন