রংপুরের ঐতিহ্যবাহী জিআই পণ্য ‘হাঁড়িভাঙা’ আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই আম বিক্রি শুরু হয়েছে । চাষি ও ব্যবসায়ীদের ধারণা, এবার রংপুরের বাগান থেকে ২০০ কোটি টাকার বেশি আম বিক্রি হবে। উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে দাম কিছুটা কমলেও চাষিরা বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে গড় লাভের আশা করছেন।
রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে হাঁড়িভাঙা আমের বিক্রি শুরুর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় আমচাষি, ব্যবসায়ী ও কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় হয়। বর্তমানে হাঁড়িভাঙা আমের গড় মূল্য কেজিপ্রতি ৫০ থেকে ৬০ টাকা ধরা হলেও, এ মৌসুমে রংপুরে ২০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের রংপুরের উপপরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “হাঁড়িভাঙা আম রংপুরের কৃষি অর্থনীতিকে গতিশীল করেছে।”
ক্রেতাদের অভিযোগ, বাণিজ্যিক চাহিদা মেটাতে কীটনাশকের ব্যবহার বেড়েছে। অনেক আম এখনও সম্পূর্ণ পাকেনি, কিন্তু কৃত্রিমভাবে পাকিয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে, যা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। চাষিরাও স্বীকার করেন যে, গাছ থেকে তোলার ৮-১০ দিন আগে অনেকেই ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ব্যবহার করেন।
এছাড়া, হাঁড়িভাঙা আম পাকলে মাত্র ৩-৪ দিন সংরক্ষণ করা যায়। চাষিরা জানান, সংরক্ষণের কার্যকর পদ্ধতি না থাকায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। এজন্য তারা একটি বিশেষায়িত হিমাগার নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার পদাগঞ্জ, খোড়াগাছ ও ময়েনপুর ইউনিয়নে আমের জমজমাট বেচাকেনা চলছে। পদাগঞ্জ হাটে সকাল থেকেই অটোরিকশা, ভ্যান ও পিকআপে করে আমের ক্যারেট আসছে। অনেকেই সাইকেল বা ভ্যানে করে আম বিক্রি করছেন।
চাষি মিজানুর রহমান ও মাইনুল ইসলাম জানান, আমের আকারভেদে প্রতি মণ ১,২০০ থেকে ২,৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এবার অতিরিক্ত গরমের কারণে আগেই আম পাড়া শুরু হয়েছে, তবে কিছু ক্ষেত্রে কৃত্রিমভাবে পাকানো হচ্ছে, যা স্বাদে প্রভাব ফেলছে।
রংপুর শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সড়ক, সিটি বাজার, লালবাগ, মডার্ন মোড়, ধাপ বাজার ও শাপলা চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে হাঁড়িভাঙা আম পাওয়া যাচ্ছে। পাইকারি হাট ছাড়াও ফেরিওয়ালারা পাড়ায় পাড়ায় আম বিক্রি করছেন।
মন্তব্য করুন