কোরআনের বর্ণনামতে পৃথিবীর ইতিহাসে কুখ্যাত, লাঞ্ছিত ও অভিশপ্ত একটি জাতি হলো, ইহুদি জাতি। যারা যুগ যুগ ধরে আল্লাহর নাফরমানি ও সীমালঙ্ঘনের জন্য পরিচিত। যারা তাদের নবীদের হত্যা করতেও দ্বিধাবোধ করেনি। পবিত্র কোরআনে কুখ্যাত এই জাতির ব্যাপারে এসেছে— ‘তাদের ওপর আরোপ করা হলো লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা।
তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল। এ জন্য যে তারা আল্লাহর বিধানের সঙ্গে কুফরি করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। কারণ তারা ছিল নাফরমান ও সীমা লঙ্ঘনকারী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৬১)
অভিশপ্ত এই জাতি আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-কেউ ছাড় দেয়নি।
বিভিন্ন সময় তারা আমাদের নবীজি (সা.)-কে কষ্ট দিয়েছে। তাঁকে মানুষের সামনে অপমান করার চেষ্টা করেছে এমনকি হত্যা করারও চেষ্টা করেছে। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে তাদের সেই কর্মকাণ্ডগুলোর কয়েকটি তুলে ধরা হলো;
অপপ্রচার ও বিদ্রুপ করে : তারা নবীজি (সা.)-কে মানসিক ভাবে ভেঙে দিতে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম অপপ্রচার চালাত। তাঁর কথা নিয়ে বিদ্রুপ করত।
পবিত্র কোরআনে এই আচরণের কথা উল্লেখ আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ‘রায়িনা’ বলো না; বরং বল, ‘উনজুরনা’ আর শোন, কাফিরদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আজাব।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১০১৪)
‘রায়িনা’ শব্দটি আরবি ভাষায় নির্দেশসূচক শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে ‘আমাদের প্রতি লক্ষ্য করুন’। সাহাবাগণ এ শব্দটি রাসুল (সা.)-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করত।
কিন্তু এ শব্দটি ইহুদিদের ভাষায় এক প্রকার গালি ছিল, যা দ্বারা বুঝা হতো বিবেক বিকৃত লোক। তারা এ শব্দটি রাসুল (সা.)-এর শানে উপহাসসূচক ব্যবহার করত। মুমিনরা এ ব্যাপারটি উপলব্ধি না করে রাসুল (সা.)-এর শানে ব্যবহার করা শুরু করে, ফলে আল্লাহ তাআলা এ ধরণের কথাবার্তা বলতে নিষেধ করে আয়াত নাজিল করেন। এছাড়াও তারা সুযোগ পেলে নবীজি (সা.)-এর বিরুদ্ধে মিথ্যা ছড়াত। আয়েশা (রা.)-এর বিরুদ্ধে ইফকের ঘটনায়ও তাদের হাত ছিল।
যাদু করে : ইহুদিরা নবীজি (সা.)-কে দমিয়ে দেওয়ার জন্য যাদুটোনা করার মতো জঘন্য পথও অবলম্বন করেছিল। হাদিসে আছে, লাবীদ ইবনে আ‘সাম নামক এক ইহুদি চিরুনী, মাথা আঁঁচড়ানোর সময় ঝরে পড়া চুল ও খেজুর গাছের জুব ব্যবহার করে নবীজি (সা.)-এর জন্য যাদু করেছিল। পরবর্তীতে মহান আল্লাহ স্বপ্নের মাধ্যমে তাঁকে বিষয়টি জানান এবং তা নষ্ট করে দেওয়ার পদ্ধতি শিখিয়ে দিলে নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে তা কূপ থেকে তুলে নষ্ট করে দেন। (বিস্তারিত : বুখারি, হাদিস : ৫৭৬৩)
হত্যাচেষ্টা করে : ইহুদিরা প্রিয় নবীজি (সা.)-কে হত্যা করার উদ্দেশ্যেও বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিল। তার মধ্যে একটি পদক্ষেপ ছিল খাবারে বিষ মেশানো। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, এক ইহুদি নারী নবী (সা.)-এর খিদমতে বিষ মিশানো বকরি নিয়ে এলো। সেখান থেকে কিছু অংশ তিনি খেলেন, অতঃপর নারীকে হাজির করা হলো। তখন বলা হলো, আপনি কি একে হত্যা করবেন না? তিনি বলেন, না। আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.)-এর তালুতে আমি বরাবরই বিষক্রিয়ার আলামত দেখতে পেতাম। (বুখারি, হাদিস : ২৬১৭)
এছাড়াও তারা ছাদ থেকে পাথর ফেলেও নবীজি (সা.)-কে হত্যা করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ জিবরাঈল (আ.)-এর মাধ্যমে ঘটনাটি নবীজিকে অবগত করলে তিনি সেখান থেকে সরে পড়েন। (আর-রাহিকুল মাখতুম)
সাহাবায়ে কেরামের মাঝে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে : ইবনে ইসহাক বর্ণনা করেছেন যে, শাস ইবনে কায়স নামক একজন বৃদ্ধ ইহুদি ছিল। সে মুসলিমদের প্রতি চরম শত্রুতা ও হিংসা পোষণ করত। সে একদা সাহাবীগণের (রা.) একটি মজলিসের পাশ দিয়ে গমন করছিল যে মজলিসে আউস ও খাজরাজ উভয় গোত্রেরই লোকেরা পরস্পর কথোপকথন করছিলেন।
ইসলামের চির শত্রু থাকা এই দুই গোত্রের মাঝে শত্রুতা তৈরি করতে সে তার এক যুবক সঙ্গীকে নির্দেশ দিল যে, সে যেন তাদের মজলিসে যায় এবং তাদের সঙ্গে বসে গিয়ে বুআস যুদ্ধ এবং তার পূর্ববর্তী অবস্থা আলোচনা করে এবং ঐ সময়ে উভয় পক্ষ হতে যে সকল কবিতা পাঠ করা হয়েছিল ওগুলোর কিছু কিছু পাঠ করে শুনিয়ে দেয়। ওই কবিতাগুলো শোনা মাত্রই উভয় গোত্রের লোকদের মধ্যে পুরনো হিংসা বিদ্বেষের আগুন দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল এবং উভয় পক্ষের মধ্যে অনেক বাক বিতন্ডা হয়ে গেল। যুদ্ধের উন্মাদনা নিয়ে উভয় পক্ষের যোদ্ধাগণ হার্রাহ নামক স্থানে সমবেত হলেন। এ দুঃসংবাদ পাওয়া মাত্রই রাসুলুল্লাহ (সা.) মুহাজির সাহাবিগণ (রা.)-কে সঙ্গে নিয়ে তাঁদের মাঝে আগমন করে তাদের থামান। (আর-রাহিকুল মাখতুম)
মন্তব্য করুন