
কয়েক দিনের টানা বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় সব নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করছে। এতে জেলার ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে ৬ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও আবাদি জমি, গাছপালা।
সরেজমিনে ফুলছড়ি উপজেলার ব্রক্ষপুত্র নদী বেষ্টিত ফজলুপুর ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে পানি বাড়ছে নদীতে। এর কারণে ওই ইউনিয়নের পশ্চিম খাটিয়ামারী, উজালডাঙ্গা, কাউয়াবাধা, কাবিলপুর, গুপ্তমনি, মনোহরপুরসহ প্রায় প্রতিটি এলাকার মানুষ পড়েছে চরম বিপাকে। হুমকির মুখে পশ্চিম খাটিয়ামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চন্দনস্বর নিম্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয়, টাওয়ার বাজারসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
পশ্চিম খাটিয়ামারী টাওয়ার বাজার এলাকার আম্বিয়া বেগম বলেন, ভাংতে ভাংতে আমাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। আবারও আমরা ভাঙ্গনের স্বিকার হয়েছি। এবার নতুন করে ব্যাপক ভাঙ্গন শুরু হলে আমাদের এই বাড়ির ভিটাটাও মনে হয় থাকবে না। তিনি আরও বলেন, আমার আয়ের প্রধান উৎস গৃহপালিত গবাদি পশু-পাখি। কিন্তু এলাকার উচু জায়গাগুলো পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় তাদের খাবার সংকট ব্যাপক হারে দেখা দিয়েছে। এতে করে আমিসহ সকলে পড়েছি বিপাকে।
ফজলুপুর ইউপির পশ্চিম খাটিয়ামারী গ্রামের আলমাছ মিয়া বলেন, আমার পূর্ব খাটিয়ামারী গ্রামের অনেক এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ঐ এলাকার অনেক ঘর বাড়িসহ রাস্তা ঘাট নদীতে ভেঙ্গে বিলিন হয়ে গেছে। এখনেই এই ভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব না হলে একসময় আমাদের সম্পূর্ণ এলাকাটি বিলিন হয়ে যাবে।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মুক্তার হোসেন বলেন, প্রত্যক বছরে ভাঙে। এখানেতো ভাঙনরোধে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। প্রতি বছর ভাঙনে অনেক পরিবার তাদের বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে ফেলেন। তাই ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি হয়ে পড়েছে।’
এদিকে, ফুলছড়ি উপজেলার উড়িয়া ইউনিয়নের উত্তর উড়িয়া থেকে কটিয়ারভিটা পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র নদী ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙনের ফলে নদীগর্ভে বিলিন হচ্ছে বাড়ি-ঘর, গাছপালা ও আবাদী জমি। সবচেয়ে বেশি ভাঙন দেখা দিয়েছে, উড়িয়া ইউনিয়নের কটিয়ারভিটা, উত্তর উড়িয়া, কালাসোনা, জোড়াবাড়ি, কাবিলপুর গ্রামে। এছাড়াও ফুলছড়ি, ফজলুপুর ও এরেন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দেখা দিয়েছে।
উড়িয়া ইউনিয়নে হুমকির মুখে পড়েছে কটিয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর উড়িয়া কমিউনিটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন কাবিলপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দাড়িয়ারভিটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়া কয়েকটি মসজিদ, মন্দির, কবরস্থানসহ বেশ কয়েকটি সামাজিক অবকাঠামো ভাঙন ঝুঁকিতে রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চরাঞ্চলে ভাঙনের তীব্রতা বেশি, কিন্তু সেখানে প্রতিরক্ষামূলক কাজ করার চেষ্টা করছি।