ঢালিউড সিনেমার একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী, জীবন্ত কিংবদন্তি আফরোজা সুলতানা রত্না, যিনি শাবানা নামেই বেশি পরিচিত, বর্তমানে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি উপহার দিয়েছেন অসংখ্য সুপারহিট চলচ্চিত্র। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে হঠাৎ করেই সিনেমা জগত থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।
প্রায় ২৫ বছর আগে, ২০০০ সালে, তিনি অভিনয় ছেড়ে পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দেশে এলেও চলচ্চিত্র অঙ্গনের মানুষের সঙ্গে তার যোগাযোগ এখন অনেকটাই কম। কয়েক বছর আগে দেশে আসার সময় শাবানা এক সাক্ষাৎকারে জানান, তার একটি স্বপ্ন আজও অপূর্ণ রয়ে গেছে, যা মনে করলে এখনো আফসোসে ভুগেন তিনি।
শাবানা জানান, বিখ্যাত নির্মাতা সুভাষ দত্ত তাকে বলেছিলেন— “তোমার মুখের আদল বেগম রোকেয়ার মতো।” এই তুলনায় শাবানা অত্যন্ত গর্বিত ও আনন্দিত হয়েছিলেন। সুভাষ দত্ত জানিয়েছিলেন, তিনি বেগম রোকেয়াকে নিয়ে একটি সিনেমা বানাতে চান, যেখানে শাবানা মূল চরিত্রে অভিনয় করবেন। শাবানারও ইচ্ছা ছিল রূপালি পর্দায় বেগম রোকেয়া হয়ে ওঠার। প্রায় ৩০ বছর আগে ‘বেগম রোকেয়া’ নামের সিনেমার শুটিংও শুরু হয়েছিল। একদিন শুটিং হয়েছিল, কিন্তু এরপর সেই কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর কখনো তা এগোয়নি। পরিচালক সুভাষ দত্তের মৃত্যুর পর প্রকল্পটি চিরতরে থেমে যায়। শাবানার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। আজও তিনি সেই অপূর্ণ ইচ্ছাকে মনে করে আফসোস করেন।
জানা গেছে, ‘বেগম রোকেয়া’ সিনেমাটির মহরত হয়েছিল এবং একদিনের শুটিংও হয়েছিল। কিন্তু সুভাষ দত্তের মৃত্যুর কারণে সিনেমাটি আলোর মুখ দেখেনি এবং আর কোনো দিন সম্ভব হবে না বলেই ধারণা করা হয়।
উল্লেখ্য, শাবানার জন্ম ১৯৫৩ সালের ৫ জুন, চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। তার বাবার নাম ফয়েজ চৌধুরী, যিনি একজন টাইপিস্ট ছিলেন এবং মা ফজিলাতুন্নেসা ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলায় গেন্ডারিয়া হাইস্কুলে ভর্তি হলেও পড়াশোনায় মন ছিল না তার। মাত্র ৯ বছর বয়সে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে যায়। চলচ্চিত্র পরিচালক এহতেশাম, যিনি তার বাবার খালাতো ভাই, তার হাত ধরেই শাবানার চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে।
শাবানা ১৯৬২ সালে ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় জীবন শুরু করেন। এরপর ১৯৬৭ সালে ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রে নায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন চিত্রনায়ক নাদিমের বিপরীতে। এহতেশামই তাকে “শাবানা” নাম দিয়ে বড় পর্দায় পরিচিত করে তোলেন।
৩৬ বছরের কর্মজীবনে শাবানা অভিনয় করেছেন ২৯৯টি সিনেমায়। ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত তিনি ঢালিউডের শীর্ষ নায়িকা ছিলেন। অভিনয়ের স্বীকৃতি হিসেবে তিনি ৯ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও ১ বার প্রযোজক হিসেবে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করেন। ২০১৭ সালে তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়।
ব্যক্তিগত জীবনে, শাবানা ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিকের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ওয়াহিদ সাদিক একজন সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং তার বড় ভাই ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী এএইচকে সাদিক। শাবানার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ‘এসএস প্রোডাকশন্স’-এর দেখাশোনাও করতেন তার স্বামী। তাদের তিন সন্তান— দুই মেয়ে সুমি ও ঊর্মি এবং এক ছেলে নাহিন। ১৯৯৭ সালে চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নেওয়ার ঘোষণা দেন শাবানা এবং ২০০০ সালে সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান।
মন্তব্য করুন