চলতি অর্থবছরের শেষ ছয় মাসের (জানুয়ারি-জুন ২০২৫) জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সংরক্ষণ এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার বিষয়গুলো বিশেষ গুরুত্ব পাবে। তবে, ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদরা সংকোচনমূলক নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সুদের হার না বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছেন। তাদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোই বর্তমান সময়ের মূল চ্যালেঞ্জ।
সরকার পরিবর্তনের পর নতুন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর পূর্ববর্তী মুদ্রানীতি পর্যালোচনা না করলেও, বাজারে টাকার প্রবাহ কমাতে নীতি সুদহার বৃদ্ধি করেছেন। তবে এর প্রভাব এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে দেখা যায়নি, কারণ গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি উচ্চমাত্রায় ছিল। জানুয়ারিতে কিছুটা কমলেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখনও চড়া।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত মুখপাত্র মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানিয়েছেন, এবারের মুদ্রানীতি অত্যন্ত সতর্কতামূলক হবে। অর্থনীতির চ্যালেঞ্জগুলো বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, রিজার্ভ সংরক্ষণ এবং বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখাই প্রধান লক্ষ্য হবে।
সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় সুদের হার বাড়লে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ)-এর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি ভিন্ন। বিশ্বের অন্যান্য দেশে ভোক্তা ঋণের হার বেশি থাকায় সুদ বাড়ালে ভোক্তারা খরচ কমিয়ে দেন। কিন্তু বাংলাদেশে এটি কার্যকর নাও হতে পারে। তাই সংকোচনমুখী নীতির পরিবর্তে ভারসাম্যপূর্ণ মুদ্রানীতি প্রয়োজন।
নতুন মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য হবে বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখা এবং রিজার্ভের পতন রোধ করা। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, অতিরিক্ত সংকোচনমুখী নীতি গ্রহণ করলে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইএসএস)-এর গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবীর বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বজায় রাখা সম্ভব নয়। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, পাশাপাশি সুদের হারও সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে। নমনীয় মুদ্রানীতি গ্রহণ করা হলে তা দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসার জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মন্তব্য করুন