যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার ফিলিস্তিনিরা দৃঢ় কণ্ঠে জানিয়ে দিয়েছে—তারা নিজেরাই নিজেদের উপকূলীয় পর্যটনশিল্প, হোটেল ও রেস্টুরেন্ট গড়ে তুলবে এবং গাজার পুনর্নির্মাণে তারা সম্পূর্ণ প্রতিজ্ঞ।
তারা মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সেই পরিকল্পনা কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে, যেখানে তিনি গাজাকে জনশূন্য করে এটিকে ‘মধ্যপ্রাচ্যের রিভেরা’ বা বিলাসবহুল নগরীতে পরিণত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
টানা ১৫ মাস ধরে চালানো ইসরাইলি আগ্রাসনে গাজার বহু ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তবে দীর্ঘদিনের অবরোধ সত্ত্বেও গাজাবাসী ইতিপূর্বে স্থানীয় পর্যটনশিল্প গড়ে তুলেছিল। সেই অধ্যায়কে পুনরুজ্জীবিত করার অঙ্গীকারই তারা করছে এখন।
গাজার বাসিন্দা আসাদ আবু হাসেইরা ট্রাম্পের পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “কোনো কিছু পুনর্নির্মাণ করা অসম্ভব নয়। আমরা আমাদের রেস্টুরেন্ট আবার গড়ে তুলব, আবার চালাব।”
একইভাবে, রেস্টুরেন্ট মালিক মোহাম্মদ আবু হাসেইরা বলেন, “আমাদের রেস্টুরেন্ট আগের চেয়েও ভালো অবস্থায় ফিরে আসবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমাদের ব্যবসা, হোটেল-রেস্টুরেন্ট তো আগে থেকেই ছিল! তাহলে এগুলো ধ্বংস করা হলো কেন? আর এখন নতুন করে বানানোর পরিকল্পনা কিসের?”
গাজার এক সময়ের জমজমাট পর্যটনশিল্পের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, “একসময় ইসরাইলিরাও এখানে পর্যটক হিসেবে আসত। ২০০৭ সালে হামাস গাজার শাসনভার নেওয়ার পরও এখানে রেস্টুরেন্ট-ক্যাফেগুলো সরগরম ছিল। কিন্তু বর্বর ইসরাইল তা সহ্য করতে পারেনি, তাদের আগ্রাসন বাড়িয়ে দিয়েছে।”
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের আকস্মিক অভিযানের পর থেকে ইসরাইলি বাহিনী টানা ১৫ মাস ধরে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। প্রাণ গেছে ৬২ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনির। আর এখন যুক্তরাষ্ট্র চায়, গাজাকে ফিলিস্তিনিদের থেকে মুক্ত করে সেখানে নিজেদের ব্যবসা-বাণিজ্য বিস্তার করতে।
গাজাকে ফিলিস্তিনিদের থেকে মুক্ত করে বিলাসবহুল পর্যটন কেন্দ্র বানানোর এই পরিকল্পনা মূলত ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের পুরনো প্রস্তাবেরই পুনরাবৃত্তি।
তবে এই পরিকল্পনা বিশ্বজুড়ে তীব্র নিন্দার মুখে পড়েছে। সমালোচকরা এটিকে ‘জাতিগত নির্মূলের’ শামিল এবং আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থি বলে উল্লেখ করেছেন।
গাজার জনগণও এই প্রস্তাবকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা অঙ্গীকার করেছে, “আমাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আমরা কখনোই অন্য কোথাও যাব না। গাজা আমাদের, আমরাই গড়ে তুলব!”
যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের প্রস্তাব ফিলিস্তিনিদের মনে ১৯৪৮ সালের সেই ‘নাকবা’ বা মহাবিপর্যয়ের স্মৃতিকে ফিরিয়ে আনে, যখন ইসরাইল রাষ্ট্র গঠনের পর ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনিকে তাদের নিজ ভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল।
সূত্র: রয়টার্স
মন্তব্য করুন