বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে পরিণত হয়েছে। এর পেছনে কাজ করছে বিভিন্ন কোম্পানি, যেমন ডিপসিক এআই ও ওপেনএআই। এই দুটি কোম্পানি নিজেদের অত্যাধুনিক এআই মডেলের জন্য পরিচিত, তবে তাদের সমস্যা সমাধানের পদ্ধতিতে রয়েছে পার্থক্য। বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে তাদের মধ্যে কিছু মূল পার্থক্য।
ওপেনএআই তাদের চ্যাটজিপিটির মতো এআই চ্যাটবট মডেল তৈরির জন্য সুপরিচিত, যা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে, প্রবন্ধ লিখতে পারে এবং মানুষের সাথে কথোপকথন চালিয়ে যেতে পারে। এসব মডেল বহুমুখী কাজের জন্য উপযোগী। ওপেনএআই বিশাল ডেটাসেট ও শক্তিশালী কম্পিউটার ব্যবহার করে এসব মডেল প্রশিক্ষণ দেয়, তবে এতে অনেক অর্থ এবং শক্তি খরচ হয়।
অন্যদিকে, ডিপসিক এআই তাদের মডেলগুলিকে আরও দক্ষ এবং সহজে ব্যবহারের উপযোগী করার দিকে মনোযোগ দিয়েছে। তারা মডেল প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্থান কমানোর ওপর জোর দেয়। গবেষণার মতে, ডিপসিক তাদের মডেলগুলিকে ওপেনএআইয়ের তুলনায় ৩০% কম শক্তি ব্যবহার করে প্রশিক্ষণ দিতে সক্ষম, তবে তারা একইরকম নির্ভুলতা বজায় রাখে। ফলে ডিপসিকের পদ্ধতিটি টেকসই এবং সাশ্রয়ী।
ওপেনএআই-এর মডেলগুলো মূলত ‘লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল’ হিসেবে পরিচিত, যা বিভিন্ন ধরণের টেক্সট বিশ্লেষণ, চ্যাটিং, এবং কনটেন্ট তৈরির জন্য প্রশিক্ষিত। এসব মডেল মানুষের প্রতিদিনের সৃজনশীল কাজের জন্য জনপ্রিয়, যেমন লেখালেখি এবং শিক্ষাগত কাজে সহায়তা প্রদান।
এদিকে, ডিপসিক এআই আরও বিশেষায়িত পদ্ধতি গ্রহণ করেছে এবং বিভিন্ন শিল্পের সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছে। যেমন, তারা চিকিৎসা সংশ্লিষ্ট ছবি বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ে সহায়তা করছে এবং কৃষকদের স্যাটেলাইট ডেটা ব্যবহার করে ফসলের স্বাস্থ্য পর্যবেক্ষণ করতে সাহায্য করছে। এসব টুল বিশেষভাবে কার্যকর, যেখানে নির্ভুলতা এবং দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এআইয়ের নৈতিকতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে ওপেনএআই গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছে। তারা তাদের মডেলগুলিকে নিরাপদ এবং নিরপেক্ষ করতে গবেষণা পত্র ও নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। বিপরীতে, ডিপসিক এআই এমন সিস্টেম তৈরি করেছে যা সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে এবং ব্যবহারকারীদের জন্য তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা হয়। এটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা এবং অর্থের মতো ক্ষেত্রে, যেখানে ভুল সিদ্ধান্তের গুরুতর পরিণতি হতে পারে।
ওপেনএআই-এর মডেলগুলো সাধারণত সৃজনশীলতা, চ্যাটিং এবং সাধারণ কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যখন ডিপসিক এআই বিশেষ শিল্পে, যেমন স্বাস্থ্যসেবা এবং কৃষিতে, নির্ভুলতা এবং দক্ষতা নিয়ে কাজ করছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ওপেনএআই সৃজনশীল কাজ এবং চ্যাটিংয়ে উচ্চ স্কোর করেছে, আর ডিপসিক বিশেষ কাজে যেমন চিকিৎসা নির্ণয় এবং আর্থিক পূর্বাভাসে ভাল পারফর্ম করেছে।
দুটি কোম্পানিই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির ক্ষেত্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে এবং এই প্রযুক্তি ব্যবহারকারীদের জীবনের উন্নতির জন্য নতুন নতুন উপায় তুলে ধরছে।
মন্তব্য করুন