রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থানের দিকে দ্রুত এগুচ্ছে । এতে নদীর তীরবর্তী জেগে ওঠা চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি ও বসতবাড়ি। গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন চরবাসীরা।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) সকাল ৯ টায় রাজশাহী পয়েন্টে পদ্মার পানি রেকর্ড করা হয়েছে ১৭.৪৩ মিটার, যা বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটারের মাত্র ০.৬৬ মিটার নিচে। পানি বৃদ্ধির কারণে নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি এড়াতে টি-বাঁধ এলাকায় প্রবেশ ও পরিদর্শন কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। পাশাপাশি নদীর পাড় সংলগ্ন ব্যবসায়ী ও দোকানিদেরও স্থানত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৪ জুলাই রাজশাহীতে পদ্মার পানি বাড়তে শুরু করে। ওইদিন পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৩৫ মিটার। পরবর্তীতে পানি কিছুটা কমলেও ৩১ জুলাই থেকে আবারও বৃদ্ধি শুরু হয় এবং এখনও তা অব্যাহত আছে।
গত ১০ আগস্ট সকাল ৬টায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.১৩ মিটার, যা একই দিনের সন্ধ্যায় বেড়ে দাঁড়ায় ১৭.২২ মিটারে। ১১ আগস্ট সকালে তা হয় ১৭.৩২ মিটার এবং সন্ধ্যায় পৌঁছায় ১৭.৩৯ মিটারে।
চরাঞ্চলে বিপর্যয়
পানি বৃদ্ধির ফলে রাজশাহী ও সংলগ্ন বিভিন্ন চরের ওপরের অংশ ডুবে গেছে। চর খিদিরপুরের বাসিন্দা মাসুদ বলেন, “নদীর পানি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় চরগুলো তলিয়ে গেছে। আমরা গবাদিপশু ও মালামাল লোকালয়ে নিয়ে এসেছি, কিন্তু খাওয়ানোর জন্য এখন গোখাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।
আরেক বাসিন্দা ইমরান আলী জানান, প্রতিদিন নৌকায় করে চরবাসীরা মালামাল সরাচ্ছেন। কেউ আত্মীয়ের বাড়িতে, কেউ ভাড়া বাসায় উঠছেন। গবাদিপশু সরাতে গিয়ে অনেকেই সমস্যায় পড়ছেন, কারণ চর এলাকায় এখনও বহু পশু রয়ে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসনের উদ্বেগ
পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য সহিদুল ইসলাম বলেন, “অনেকের বাড়ির কাছে পানি পৌঁছে গেছে। চর ছেড়ে লোকালয়ে সরে যাওয়ার প্রক্রিয়া চলছে, তবে গবাদিপশু নিয়ে মানুষের দুশ্চিন্তা সবচেয়ে বেশি।”
পাউবোর গেজ রিডার এনামুল হক জানান, রাজশাহীতে পদ্মার বিপৎসীমা ১৮.০৫ মিটার। সোমবার সন্ধ্যায় পানির উচ্চতা ছিল ১৭.৩৯ মিটার, যা বিপৎসীমার খুব কাছাকাছি। মঙ্গলবার পানির উচ্চতা মাপা হয় ১৭.৪৩ মিটার। যা বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই অবস্থানে রয়েছে।
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি
স্থানীয়দের ধারণা, উজানে ভারী বৃষ্টিপাত বা গঙ্গার পানি প্রবাহ বাড়তে থাকলে পদ্মার পানি দ্রুত বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে আরও ব্যাপকভাবে সরিয়ে নেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। কৃষি জমি, বসতবাড়ি ও গোখাদ্যের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও রয়েছে। এতে নদীর তীরবর্তী জেগে ওঠা চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলের জমি ও বসতবাড়ি। গবাদিপশু ও প্রয়োজনীয় মালামাল সরিয়ে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে হিমশিম খাচ্ছেন চরবাসীরা। দীর্ঘদিন পর রাজশাহী পদ্মা নদী পানি বৃদ্ধি পাওয়া জনমনে ভীতিকর পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।#
মন্তব্য করুন