কিংস্টনের সাবিনা পার্কে ম্যাচ শেষে জ্যামাইকার সংস্কৃতি ও ক্রীড়া মন্ত্রী অলিভিয়া গ্রেঞ্জ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি অলরাউন্ডার আন্দ্রে রাসেলকে একটি গিটার-আকৃতির ব্যাট উপহার দেন। এটি ছিল রাসেলের ক্রিকেট ক্যারিয়ারের একটি প্রতীকী সম্মান। যেমন কোনো বিখ্যাত গিটারিস্ট মঞ্চে তার সুর দিয়ে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন, তেমনি রাসেলও সারাক্যারিয়ার জুড়ে ২২ গজে তার ব্যাটকে গিটারের মতোই বাজিয়ে পুরো বিশ্বকে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এর আগেই ৩৭ বছর বয়সী রাসেল ঘোষণা করেছিলেন, তার জন্মভূমি কিংস্টনের সাবিনা পার্কেই তিনি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের ইতি টানবেন। এই মাঠ থেকেই তিনি একজন দক্ষ ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্ব ক্রিকেটে নিজের দাপুটে উপস্থিতি জানান দিয়েছিলেন। ব্যাট হোক বা বল—সবক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন সমানভাবে বিপজ্জনক। অবশ্য ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তার এই ঝড়ো পদচারণা এখনও অব্যাহত থাকবে।
২০১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের পর তিনি ওডিআই ক্রিকেট থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। আগামী বছর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসছে। এই মহাযজ্ঞের আগে তরুণ খেলোয়াড়দের সুযোগ দিতেই তিনি জাতীয় দলের জার্সি গুটিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। অবসরের কারণ ব্যাখ্যা করে রাসেল বলেছিলেন, ‘আমার মনে হয়েছে, এখনই থামার সঠিক সময়। এখান থেকে তরুণরাই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে এগিয়ে নেবে। দলে শেফার্ড, রাদারফোর্ড, জোসেফ এবং হোল্ডারের মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় রয়েছেন, যারা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে সক্ষম।’
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচে রাসেল তার স্বভাবসিদ্ধ ধারায় ব্যাটিং করেছিলেন। এই ম্যাচে তার একটাই লক্ষ্য ছিল—বিজয়ী হয়ে বিদায় নেওয়া। ইনিংসের মাঝামাঝি তিনি বলেছিলেন, ‘আমি হারের মধ্যে দিয়ে শেষ করতে চাই না, এটি আমার এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ শেষ ইনিংসে তিনি ১৫ বলে ৩৬ রান করলেও জোশ ইংলিস ও ক্যামেরন গ্রিনের জুটির কাছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে হারে।
পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে রাসেলের মনোবল ও আত্মবিশ্বাস ছিল অটুট। ভক্তরা তাকে ‘দানব’ নামে ডাকতেন। কিন্তু বিদায়ের মুহূর্তে এই লড়াকু ক্রিকেটারও নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। ম্যাচ শেষে অশ্রুসিক্ত চোখে তিনি সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমি গর্বিত যে আমার ক্যারিয়ারের সমাপ্তি এখানে ঘটল। বাড়ির দর্শক, পরিবার ও বন্ধুদের সামনে খেলার সুযোগ পেয়েছি। ফলাফল আমাদের পক্ষে যায়নি, তবু আমি খুশি ও কৃতজ্ঞ।’
দর্শকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘গত দুই ম্যাচে দর্শকরা অসাধারণ ছিলেন, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা আমাদের সেরাটা দিয়েছি। এখন আমার জন্য যাত্রা শেষ। নতুন প্রজন্মকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার শুভকামনা। সাবিনা পার্কে আমার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানতে পেরে আমি ধন্য।’
এভাবেই সমাপ্তি ঘটল আন্দ্রে রাসেলের বর্ণিল আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের। তবে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে তার ঝড় এখনও বইবে।
মন্তব্য করুন