তালেবান আফগানিস্তান দখল করার পর ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার আফগান শরণার্থীকে ৭ দিনের মধ্যে দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশ না ছাড়লে জোরপূর্বক বিতাড়নের হুমকি দেওয়া হয়েছে, যা অনেক আফগান পরিবারের জন্য জীবন ঝুঁকির কারণ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
নিউজউইক-এর বরাতে জানা গেছে, মার্কিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নর্থ ক্যারোলিনার বিভিন্ন এলাকায় বসবাসরত আফগান শরণার্থীদের কাছে একটি নোটিশ পাঠিয়েছে। ওই নোটিশে বলা হয়েছে, নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র না ছাড়লে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং জোর করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট পদে জয়ী হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নীতিতে আরও কঠোর হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। বিশেষ করে, যেসব বিদেশি নাগরিকের বিরুদ্ধে অতীতে অপরাধের অভিযোগ রয়েছে, তাদের লক্ষ্য করার কথা জানিয়েছেন তিনি।
২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করার পর, বিপুলসংখ্যক আফগান যাঁরা মার্কিন বাহিনীর হয়ে দোভাষী, গোয়েন্দা সহকারী কিংবা স্থানীয় সমর্থক হিসেবে কাজ করেছেন—তাঁদেরকে মানবিক আশ্রয়, বিশেষ অভিবাসী ভিসা বা অস্থায়ী সুরক্ষিত মর্যাদার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসন করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সে সময় তাদের নিরাপদ ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কারণ আফগানিস্তানে থেকে গেলে তারা তালেবানের প্রতিশোধের শিকার হতে পারতেন।
কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন অবস্থানে সেই অস্থায়ী সুরক্ষামূলক মর্যাদা বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা হাজার হাজার আফগান নাগরিককে তালেবানের শাসিত আফগানিস্তানে ফিরে যেতে বাধ্য করবে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যম WRAL-কে একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আফগান শরণার্থী বলেন, “যদি আমরা আফগানিস্তানে ফিরে যাই, আমরা নিরাপদ থাকব না। এটা যেন নিজের মৃত্যুদণ্ডে স্বাক্ষর করার মতো।”
জাতীয় সংসদের দলিলপত্র অনুযায়ী, ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় এক লাখ পঞ্চাশ হাজার আফগান নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসিত হয়েছেন। মানবাধিকারকর্মী ও নীতিনির্ধারকেরা এই সিদ্ধান্তকে নিষ্ঠুর এবং স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন বলে আখ্যায়িত করেছেন।
তাদের মতে, এই ধরনের পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক মর্যাদা ও বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষুণ্ন করবে এবং ভবিষ্যতে যেসব দেশে মার্কিন বাহিনী কার্যক্রম চালাবে, সেখানে স্থানীয় সহযোগিতা পাওয়ার সক্ষমতাও হ্রাস পাবে।
মন্তব্য করুন