গত দুই বছরে বাংলাদেশে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে সাম্প্রতিক তথ্যে জানা গেছে। হত্যা, ছিনতাই, মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর গ্যাং। তবে আশঙ্কাজনক এই প্রবণতা বৃদ্ধি সত্ত্বেও এ বিষয়ে পর্যাপ্ত গবেষণা ও প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহণে উদাসীনতা দেখা যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ২০২২ সালে দেশে কিশোর গ্যাংয়ের সংখ্যা ছিল ১৭৩টি যার সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় এক হাজার। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩৭টি গ্যাংয়ে, যার সদস্য সংখ্যা ২,৩৮২ জনে পৌঁছেছে। অর্থাৎ মাত্র দুই বছরে গ্যাং সংখ্যা বেড়েছে ৬৪টি এবং সদস্য সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দেড় হাজার।
যদিও কিশোর অপরাধের মাত্রা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে, এ বিষয়ে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে তেমন কোনো গবেষণা নেই বললেই চলে। পুলিশ সদর দপ্তরেও কিশোর অপরাধীদের নিয়ে পৃথক কোনো ডাটাবেইজ পাওয়া যায়নি। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড হিউম্যানিটিজের ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১২ থেকে ১৬ বছর বয়সী কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা ছয় বছরে ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।
গবেষণায় দেখা যায়, বর্তমানে অপরাধে জড়িত শিশুদের ৭৫ শতাংশই বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত। মাদকাসক্তি ও মাদক ব্যবসা, চুরি-ডাকাতি, আগ্নেয়াস্ত্র বহন থেকে শুরু করে ধর্ষণ ও হত্যার মতো জঘন্য অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে তারা। বিশেষজ্ঞরা এর প্রধান কারণ হিসেবে দারিদ্র্য, শিক্ষার অভাব এবং পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয়কে চিহ্নিত করেছেন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসার পাশাপাশি জমি দখল, ছিনতাই ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে এসব কিশোর গ্যাং। মাদক ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিতে গ্যাংগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে প্রায়ই ঘটছে গোলাগুলি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা।
বাংলাদেশের আইনে কিশোর অপরাধীদের জন্য শাস্তির চেয়ে সংশোধনের ব্যবস্থা থাকলেও তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ হচ্ছে না বলে বিশেষজ্ঞরা মত দিয়েছেন। কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রগুলোও অপরাধ প্রবণতা রোধে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।
এই অবস্থায় কিশোর অপরাধ মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি, পারিবারিক বন্ধন সুদৃঢ়করণ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, বর্তমানের এই উদাসীনতা ভবিষ্যতে আরও বড় সামাজিক সংকট ডেকে আনতে পারে।
মন্তব্য করুন