তাইওয়ানের উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব উপকূলে মঙ্গলবার বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে চীন। বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবার্তা হিসেবে এই মহড়া পরিচালিত হয়। একই সময়ে, তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট লাই চিং-তেকে ‘পরজীবী’ বলে অভিহিত করেছে চীন। চীনের এই মহড়ার প্রতিক্রিয়ায় তাইওয়ানও পাল্টা যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে।
গত বছরও তাইওয়ান ঘিরে বিশাল সামরিক মহড়া চালিয়েছিল চীন। তবে, এবার আনুষ্ঠানিক নাম ছাড়াই মহড়াটি পরিচালিত হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথের আসন্ন এশিয়া সফর এবং প্রেসিডেন্ট লাইয়ের সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় চীন এই মহড়া শুরু করেছে। লাই চীনবিরোধী কণ্ঠস্বর হিসেবে পরিচিত।
চীন এই মহড়ায় সমন্বিতভাবে নৌ, বিমান ও স্থলবাহিনীকে যুক্ত করেছে। এর মূল লক্ষ্য ছিল তাইওয়ানকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করার সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন। ভূমি ও সাগর থেকে লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চীনের শানডং এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ার গ্রুপ সোমবার তাদের নজরদারি এলাকায় প্রবেশ করে। জবাবে, তাইওয়ানও সামরিক বিমান ও যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় রাখে।
চীন বরাবরই তাইওয়ানকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে দাবি করে আসছে। সম্প্রতি, প্রেসিডেন্ট লাই চীনকে ‘বিদেশি শত্রু শক্তি’ বলে উল্লেখ করেন, যা চীনকে ক্ষুব্ধ করে তোলে।
সামরিক মহড়ার ঘোষণার সঙ্গে চীন একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে প্রেসিডেন্ট লাইকে কার্টুন আকৃতির এক পরজীবী পোকার মতো দেখানো হয়। ভিডিওতে তাকে চপস্টিক দিয়ে ধরে রাখা হয়েছে, আর নিচে জ্বলন্ত তাইওয়ান চিত্রিত হয়েছে। এতে লেখা ছিল: “তাইওয়ানকে বিষাক্ত করছে এই পরজীবী। এটি দ্বীপটিকে ফাঁপা করে দিচ্ছে এবং ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছে।”
তাইওয়ান সরকার চীনের এই মহড়ার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। প্রেসিডেন্টের কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, “চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য একটি সমস্যা সৃষ্টি করছে। আমরা আমাদের আত্মরক্ষায় সক্ষম।” তাইওয়ান সরকার বেইজিংয়ের সার্বভৌমত্বের দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং জানায় যে শুধু তাইওয়ানের জনগণই তাদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করতে পারে।
তাইওয়ানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুসারে, অন্তত ১০টির বেশি চীনা যুদ্ধজাহাজ তাইওয়ানের ২৪ নটিক্যাল মাইল (৪৪ কিলোমিটার) সংলগ্ন এলাকায় প্রবেশ করে। জবাবে তাইওয়ান নিজস্ব যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করে। তবে, তারা চীনের সরাসরি গুলিবর্ষণের কোনো ঘটনা শনাক্ত করতে পারেনি। অন্তত ৭১টি চীনা সামরিক বিমান ও ১৩টি যুদ্ধজাহাজ মহড়ায় অংশ নিয়েছে। তবে মহড়াটি কখন শেষ হবে, তা এখনো অনিশ্চিত।
তাইওয়ানের সামরিক মুখপাত্র সান লি-ফ্যাং বলেছেন, “আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সতর্ক রয়েছে যাতে চীন যুদ্ধের জন্য মহড়ার আড়ালে আকস্মিক হামলা চালাতে না পারে।”
এক শীর্ষস্থানীয় তাইওয়ান নিরাপত্তা কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, চীন ওয়াশিংটনের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষ এড়াতে চায়। কারণ, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আসন্ন বাণিজ্য আলোচনা ভেস্তে যেতে দিতে চায় না।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, “এই মহড়া জাতীয় সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয় ঐক্য রক্ষার জন্য বৈধ ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।”
মন্তব্য করুন