মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ও সাইবার হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) প্রকাশিত বার্ষিক হুমকি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বেইজিং তাইওয়ান দখলের লক্ষ্যে সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। যদিও এই অগ্রগতি ‘স্থিতিশীল হলেও অসমান’।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে,
চীন প্রচলিত অস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে হামলা চালানোর সক্ষমতা রাখে।
সাইবার হামলার মাধ্যমে মার্কিন অবকাঠামো বিপর্যস্ত করতে পারে।
মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদের ওপরও হামলার ক্ষমতা রয়েছে।
২০৩০ সালের মধ্যে বিশ্বে শীর্ষ এআই ক্ষমতাধর দেশ হওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাশিয়া, ইরান, উত্তর কোরিয়া ও চীন সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ করতে সচেতন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের অভিজ্ঞতা থেকে পশ্চিমা অস্ত্র ও গোয়েন্দা কৌশল সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা লাভ করেছে, যা ভবিষ্যতের বৃহৎ পরিসরের যুদ্ধে কাজে লাগতে পারে।
প্রতিবেদনটি এমন সময়ে প্রকাশিত হয়েছে, যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গোয়েন্দা কর্মকর্তারা মার্কিন সিনেটের গোয়েন্দা কমিটিতে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
সিনেট কমিটিতে দেওয়া বক্তব্যে মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড বলেন,
“চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক ভাষার মডেল ব্যবহার করে ভুয়া খবর তৈরি, পরিচয় চুরি এবং সাইবার নেটওয়ার্কের ওপর আক্রমণের পরিকল্পনা করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “চীনের সামরিক বাহিনী উন্নত প্রযুক্তি মোতায়েন করছে, যার মধ্যে রয়েছে হাইপারসনিক অস্ত্র, স্টেলথ বিমান, উন্নত সাবমেরিন, শক্তিশালী মহাকাশ ও সাইবার যুদ্ধ সক্ষমতা এবং বৃহত্তর পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার।” তিনি চীনকে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সবচেয়ে দক্ষ কৌশলগত প্রতিযোগী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন একটি বহুমুখী রাষ্ট্রীয় কৌশল গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী এআই ক্ষমতাধর দেশ হওয়া।
সিআইএর পরিচালক জন র্যাটক্লিফ কমিটিকে জানান,
“যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল সংকটের পেছনে ব্যবহৃত রাসায়নিক উপাদান সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে চীন অনিয়মিত পদক্ষেপ নিচ্ছে।”
তিনি বলেন, “বেইজিং চীনা ব্যবসাগুলোর লাভজনক কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করতে চায় না, তাই কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে না।”
ট্রাম্প প্রশাসন চীনের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়ে সব চীনা আমদানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধি করেছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, চীন ফেন্টানিল উৎপাদনে ব্যবহৃত রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে চীন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ সংকটের জন্য দায়ী নয়।
ওয়াশিংটনে চীনা দূতাবাস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এদিকে, সিনেট শুনানিতে ডেমোক্র্যাটিক সিনেটররা ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তাদের কঠোরভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। বিশেষ করে, একটি মেসেজিং অ্যাপ গ্রুপে সংবেদনশীল সামরিক পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনার ঘটনায় গোয়েন্দা প্রধানরা চাপে পড়েন। ওই গ্রুপে ভুলবশত একজন মার্কিন সাংবাদিক যুক্ত ছিলেন।
অন্যদিকে, বেশ কয়েকজন রিপাবলিকান সিনেটর যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
প্রতিবেদনের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অংশজুড়ে চীন-সংক্রান্ত উদ্বেগ প্রাধান্য পেয়েছে। এতে বলা হয়েছে,
বেইজিং তাইওয়ানের ওপর সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে।
পিএলএ তাইওয়ান দখলের সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক হস্তক্ষেপ প্রতিহত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে:
দুর্নীতি
জনসংখ্যাগত ভারসাম্যহীনতা
অর্থনৈতিক সংকট
এসব চ্যালেঞ্জ চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অভ্যন্তরীণ বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধীরগতিতে চলতে থাকবে। ভোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাব এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান অর্থনৈতিক উত্তেজনার জন্য চীনা কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন