গাইবান্ধা প্রতিনিধি 

ফেলে দেওয়া কলাগাছ দিয়ে গরুর খাবার তৈরি করে এলাকার খামারিদের মাঝে সাড়া ফেলেছেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের কানিচরিতাবাড়ি গ্রামের আইয়ুব আলী। মাসে ৪ লাখ টাকা মুনাফার স্বপ্ন দেখছেন এখন তিনি।
জানা যায়,বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব এর আবিস্কার করা কলাগাছ দিয়ে গরুর খাদ্য তৈরির পদ্ধতি সম্পর্কে আইয়ুব আলীকে প্রথম জানায় স্থানীয় একটি উন্নয়ন সংস্থা এসকেএস ফাউন্ডেশন। তাদের থেকে এ ব্যাপারে জেনে আইয়ুব আলী চিন্তা করেন কম দামের কলাগাছ দিয়ে গরুর খাদ্য তৈরি করা গেলে তার অনেক মুনাফা হবে। তাই সে রাজি হয়ে যায় কলার গাছ দিয়ে এ গোখাদ্য তৈরির শুরু করতে।
এরপর এসকেএস-এর সহায়তায় গরুর খাবার তৈরির একটি মেশিন হাতে পায় আইয়ুব আলী। সেই মেশিন চালানো এবং সেই মেশিন ব্যবহার করে কলার গাছ দিয়ে খাবার তৈরির প্রশিক্ষণও নেয় সে। তারপর বাড়ি এসে শুরু করে কলারগাছ দিয়ে গরুর খাবার তৈরি।
এ খাবার তৈরির জন্য বিভিন্ন গ্রাম থেকে কলার গাছ সংগ্রহ করে আইয়ুব আলী। এরপর সেসব গাছ বাড়িতে এনে গাছগুলো খাবার তৈরির জন্য পরিস্কার করা হয়। এরপর সেই কলার গাছ বিশেষ এক মেশিনের মাধ্যমে কুচি কুচি করে কাটা হয়। এরপর কলার গাছের সেই কুচিগুলো পলিথিন সিটের উপরে করে শুকানো হয় রোদে। রোদে শুকিয়ে কলাগাছের কুচিগুলোর ওজন প্রায় অর্ধেক করা হয়। এরপর এই শুকনো কুচিগুলোর সাথে মেশানো হয় ভুষি। প্রতি ১৭ কেজি শুকনা কলাগাছের কুচির সাথে মেশানো হয় ২ কেজি ভুষি, ১ কেজি নালি ও ২০০ গ্রাম লবন। এরপর উপাদানগুলো খুব ভালো করে মিশিয়ে নিতে হয়। পরে মিশ্রণটি প্লাস্টিকের কনটেইনারে ভরে টেপ দিয়ে মুখ সিল করে এয়ার টাইট করা হয়। এর প্রায় ২সপ্তাহ পর মিশ্রনটি বের করে আবার শুকাতে হবে। মিশ্রণটি রোদে ভালোভাবে শুকানোর পর সরাসরিও গরুকে খাওয়ানো যায়, আবার ৬ থেকে ৭ মাস সংরক্ষণ করেও রাখা যায়। প্রতি ১০ কেজি খাবার তৈরি করতে আইয়ুব আলীর বর্তমানে খরচ হচ্ছে প্রায় ২০০টাকা। আর প্রতি কেজি ৩৫টাকা করে ১০ কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। এভাবে প্রতি কেজিতে আইয়ুব আলী নীট মুনাফা করছে ১৫ টাকা।
আইয়ুব আলী বলেন, কলারগাছের সরবরাহ ভাল থাকলে এই মেশিন ব্যবহার করে মাসে তার নীট মুনাফা হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা।এছাড়া সরকারের কাছে একটি কাটা কলাগাছ শুকানোর মেশিন দাবি করেন তাহলে আরও সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।তবে শুরুতে হাসি- তামাশা করলেও বর্তমানে সবাই এখন খুশি।
এসকেএস ফাউন্ডেশনের প্রদৃপ্ত প্রজেক্টের মাঠকর্মী, আনিছুল হক প্লাবন বলেন,আইয়ুব আলীর তৈরি এ নতুন ধরনের গোখাদ্য তার এলাকায় বেশ সাড়া জাগিয়েছে। প্রতিনিয়তই খামারিরা আসছে আইয়ুব আলীর এ গোখাদ্য দেখে তার গুণাগুণ যাচাই করতে।এছাড়া বন্যা প্লাবন তার গ্রাম হওয়ায় গো খাদ্যের সংকটও কাজ করবে এই খাবার তাই এলাকাবাসীও তার উপর অনেক খুশি।
গাইবান্ধা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মো.আব্দুল লতীফ বলেন,আর প্রাণীসম্পদ বিভাগ বলছে এ পদ্ধতিতে গরুর খাদ্য উৎপাদন করা হলে তাতে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে, তেমনি গরুর খদ্য সংকটও কিছুটা দূর হবে। এ পদ্ধতিতে খাদ্য উৎপাদন সারা দেশে ছড়িয়ে দেবার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তার।
মন্তব্য করুন