মোঃ ওয়াসিমুল বারী সিয়াম, স্টাফ রিপোর্টার 

নকশায় ছিল সমাজের কথা, কাঠামোয় ছিল মানবিকতার ছাপ। তবে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে জানালেন স্থাপত্য কেবল ভবন নির্মাণ নয়, এটি মানুষের জীবন ও পরিবেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ার এক প্রয়াস।
বিশ্ব স্থাপত্য দিবসকে সামনে রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের আয়োজনে ৭ দিনব্যাপী সেমিনার ও আউটডোর এক্সিবিশন শুরু হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস্কেটবল মাঠে। আয়োজনে অংশ নেয় স্থাপত্য বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের তৈরি স্থাপত্য মডেল, স্টুডিও প্রজেক্ট ও নগর পরিকল্পনার নকশা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে।
প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ আব্দুল মতিন এবং প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. বি. সি. বসাক। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্থাপত্য বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক সোনিয়া আফরিন, বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে অতিথিরা বলেন, ❝স্থাপত্যের আসল শক্তি তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। এটি কেবল নান্দনিকতার প্রকাশ নয়; মানুষ, সমাজ ও পরিবেশের টেকসই সমাধানের এক অনন্য মাধ্যম।❞
প্রদর্শনীর বিশেষ আকর্ষণ ছিল স্থাপত্য ৮৩ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের নকশা ও ভাবনায় নির্মিত তিনটি রিয়েল স্কেল সিটিং ইনস্টলেশন, যার তত্ত্বাবধানে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক সানিয়া তাবাসসুম ও সহকারী অধ্যাপক মুজাইয়ানা নওমী খান। পুরো আয়োজনের সমন্বয়ে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক সারাহ বাশনীন, সহকারী অধ্যাপক ফারিয়া শারমিনও সাব্বির আহমেদ।
আলোচনায় স্থপতি মশিউর রহমান পবিত্র বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্সের ডিজাইন করার সময় দেখি একটি ইটালিয়ান কমোডের দাম ৮৬ হাজার টাকা, যা এক নিম্নবিত্ত পরিবারের পুরো ঘর নির্মাণের সমান। এই বৈষম্য আমাদের চোখ খুলে দেয়, সমাজভিত্তিক মানবিক স্থাপত্যচর্চা কতটা প্রয়োজন। তিনি তরুণ স্থপতিদের আহ্বান জানান, সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিক ও বাস্তবভিত্তিক স্থাপত্যচর্চা আরও সম্প্রসারণের জন্য।
দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্থাপত্য বিভাগের শিক্ষার্থী সাদী মোহাম্মদ সাদ বলেন, আজকের প্রদর্শনী থেকে আমরা অঙ্গীকার করছি সমাজ, ব্যক্তি ও রাষ্ট্রের প্রতিটি কোণে স্থাপত্যের কাজের সুযোগ রয়েছে। মানুষের জীবনমান উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি স্থপতিরাই দিতে পারেন।
বিভাগের শিক্ষকরা জানান, এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের কাজের মধ্য দিয়ে স্থাপত্যচর্চা নিয়ে উন্মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময়ের পরিবেশ তৈরি করা।
একই দিনে বিকেলে অনুষ্ঠিত হয় “Threads of Community: Architecture, Culture, Identity” শীর্ষক সেমিনার। সহযোগী অধ্যাপক সানিয়া তাবাসসুমের কনভেনরশিপে ও সহকারী অধ্যাপক ফারিয়া শারমিনের কো-কনভেনরশিপে আয়োজিত এ সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানিয়া তাবাসসুম।
তিনি স্থাপত্য, সংস্কৃতি ও পরিচয়ের সম্পর্ক নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। সেমিনারে ছয়জন প্রাক্তন শিক্ষার্থী তাঁদের কমিউনিটি-ভিত্তিক স্থাপত্যচর্চার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন, যা তরুণ স্থপতিদের অনুপ্রাণিত করে ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও মানবিক নকশার ভাবনায় আরও এগিয়ে যেতে।
বিভাগের শিক্ষকরা বলেন, এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি আয়োজন শুধু শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতাই নয়, সামাজিক দায়িত্ববোধ ও টেকসই স্থাপত্যচর্চার নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে।
মন্তব্য করুন