দিনাজপুর প্রতিনিধি 

দিনাজপুরে খাদ্য অধিদপ্তরের ‘উপখাদ্য পরিদর্শক’ পদের নিয়োগ পরীক্ষায় ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করে জালিয়াতির অভিযোগে এক পরীক্ষার্থীকে হাতেনাতে আটক করেছে পুলিশ।
২৫ অক্টোবর শনিবার সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে শহরের কেরী মেমোরিয়াল হাইস্কুল কেন্দ্র থেকে ওই পরীক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
আটক ব্যক্তির নাম কৃষ্ণকান্ত রায় (২৫)। তিনি বিরল উপজেলার সিঙ্গুল পূর্ব রাজারামপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং সম্প্রতি স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি দিনাজপুর শহরের ফকিরপাড়া এলাকার একটি ছাত্রাবাসে অবস্থান করছিলেন।
পুলিশ জানায়, পরীক্ষার সময় কৃষ্ণকান্ত পরপর কয়েকবার কাশি দিতে থাকেন। বিষয়টি পরীক্ষার দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক ও পুলিশের নজরে এলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি করা হয়। পরে তাঁর শরীর থেকে দুটি গোপন যোগাযোগ ডিভাইস উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে একটি ক্ষুদ্রাকৃতির গোল ডিভাইস কানের ভেতরে স্থাপন করা ছিল এবং অন্যটি স্যান্ডো গেঞ্জির ভেতরে লুকানো ছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন বলেন,
আমাদের কাছে আগে থেকেই তথ্য ছিল একজন পরীক্ষার্থী ডিভাইস ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ নজরদারির পর ১০১ নম্বর কক্ষে ওই পরীক্ষার্থীকে তল্লাশি করে ডিভাইসসহ আটক করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে কৃষ্ণকান্ত রায় স্বীকার করেছেন, ঢাকার একটি সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে তিনি পরীক্ষায় অংশ নেন। চক্রটির নির্দেশ ছিল পরীক্ষার প্রশ্নের সেট ‘পদ্মা’ হলে কাশি দিতে হবে, যাতে অপর প্রান্তে থাকা সদস্যরা বুঝতে পারেন কোন সেট চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী কাশি দেওয়ার সময় সন্দেহের সৃষ্টি হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধরা পড়েন তিনি।
একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরীক্ষার্থী জানান, দিনাজপুরের বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্তত ৫৫ জন পরীক্ষার্থী ডিভাইস ব্যবহার করে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে চক্রটি দেড় থেকে দুই লাখ টাকা করে নিয়েছে।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষার শুরু হওয়ার ৫ মিনিটের মধ্যেই প্রশ্নপত্র হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চক্রের হাতে পৌঁছে যায়। শহরের ফকিরপাড়া ও সুইহারি এলাকার দুটি ছাত্রাবাসে অবস্থানরত কয়েকজন শিক্ষক প্রশ্নের উত্তর তৈরি করে ডিভাইসের মাধ্যমে পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন। পরীক্ষার্থীরা সেই উত্তর শুনে ওএমআর শিট পূরণ করছিলেন।
তদন্তকারী সংস্থা ধারণা করছে, চক্রটির সঙ্গে স্থানীয় কয়েকজন শিক্ষক এবং প্রশাসনের কিছু ব্যক্তি জড়িত থাকতে পারেন।
দিনাজপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) এস এম হাবিবুল হাসান বলেন,
এটি একটি সংঘবদ্ধ চক্রের কাজ বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। একজন পরীক্ষার্থীকে হাতে-নাতে ধরতে পেরেছি। তাঁর ভাইকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে। পুরো চক্রটি শনাক্তে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা যৌথভাবে অভিযান শুরু করেছে।
প্রশ্নফাঁস ও ডিভাইসচক্রের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
মন্তব্য করুন